- সারাদেশ
- বিষটোপে ১৩ শকুনের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনের নামে অভিযোগ
বিষটোপে ১৩ শকুনের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনের নামে অভিযোগ

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেশি-বিদেশি শকুন গবেষকরা। ছবি-সংগৃহীত
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়কাঁপন গ্রামে শিয়াল মারার বিষটোপে বিলুপ্তপ্রায় ১৩ শকুনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে নেমেছেন বন্যপ্রাণী বিভাগসহ দেশি-বিদেশি শকুন গবেষক ও সংগঠনের কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন তাঁরা। বিষটোপে শকুনসহ প্রাণী হত্যা বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ওই এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তাঁরা। জনসচেতনা তৈরিতে এলাকায় মাইকিং করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে শকুন মৃত্যুর ঘটনায় দু’জনের নাম উল্লেখ করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছে বন বিভাগ।
শকুন মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ সকালে পাখিবিদ শিবলী সাদিক, টোকিও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাই সুজুকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব রোগ প্রতিরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্যপ্রাণী জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদী সারোয়ার, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন নিরোদ চন্দ্র সরকার, শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারোয়ার আলম দীপু, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহিনুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও শকুন গবেষকরা বড়কাঁপন গ্রামে ছুটে আসেন।
প্রাথমিকভাবে তাঁদের ধারণা, ছাগলের মাংসে বিষ মিশিয়ে শিয়াল মারতে চেয়েছিল স্থানীয়রা। কিন্তু এতে দুর্ভাগ্যবশত শকুনসহ অন্যান্য প্রাণী মারা যাওয়ায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ-আইইউসিএন বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সারোয়ার আলম দীপু বলেন, এ ঘটনায় আর কোনো প্রাণী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে বিষটোপে মারা যাওয়া তিনটি কুকুরকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বড়কাঁপন গ্রামের মো. রোকন ও কচনু মিয়া নামে দু’জনের বিরুদ্ধে শকুন হত্যার ঘটনায় থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন বন বিভাগের বর্ষিজোড়া বিট অফিসার আবু নঈম মো. নুরুন্নবী। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি শিয়ালের কামড়ে একটি ছাগলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দুই ব্যক্তিসহ এলাকার আরও কিছু মানুষ মরা ছাগলটির মাংসে বিষ মিশিয়ে মাঠে ফেলে রাখে। সেই মাংস খেয়ে বিলুপ্তপ্রায় ১৩ শকুনসহ শিয়াল, কুকুর, বিড়াল ও অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হয়।
মডেল থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বন বিভাগ অভিযোগ করেছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী, বাংলা শকুন মহাবিপন্ন পাখি। এ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। জলাতঙ্ক ও এনসার্ট রোগের জীবাণু একমাত্র শকুনের পাকস্থলীতে হজম হয়। তাই পাখিটি প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য খুব জরুরি। তাছাড়া কেবল শকুন নয়, যে কোনো প্রাণী মারা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
মন্তব্য করুন