- সারাদেশ
- মাংসে নয়ছয়, সবজি অস্থির
মাংসে নয়ছয়, সবজি অস্থির

কিশোরগঞ্জের বড়বাজারে প্রকাশ্যেই গাভি জবাই করে চামড়া ছাড়াচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ী। পরে সেই মাংস ষাঁড় গরু বলে বিক্রি করেছেন তিনি। ক্রেতারা জানিয়েছেন, দোকানে আলাদাভাবে উল্লেখ না থাকায় তাঁরা ব্যবসায়ীদের কথায় বিশ্বাস করেই ষাঁড় গরুর মাংস বলে কিনেছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন ষাঁড় ও গাভির দাম চড়া হওয়ায় মাংসের দামে তেমন পার্থক্য নেই। এ কারণে তাঁরা ষাঁড় কিংবা গাভি পার্থক্য করে মাংস বিক্রি করেন না।
সরকারি কর্মকর্তারাও যখন বাজার পরিদর্শনে যান, তখন ঝুলিয়ে রাখা মাংস দেখে পার্থক্যটা বুঝতে পারেন না। ফলে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। নানাভাবে কারসাজি করে বাড়তি মুনাফা করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। দাম নিয়ে এমন নয়ছয় করা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজের শিক্ষক ওমর ফারুক বলছিলেন, মাংস কেনার সময় দোকানে ষাঁড়ের মাথা দেখেছেন। তখন সব মাংসই ষাঁড়ের মনে হয়েছে। এরমধ্যে গাভির মাংস ছিল কিনা, সেটা তো বোঝা সম্ভব নয়। শহরের বত্রিশ এলাকার মোবারক হোসেনও ষাঁড়ের মনে করেই মাংস কিনেছেন।
শোলাকিয়া এলাকার মাংস ব্যবসায়ী জালাল জানান, ক্রেতার চাপ থাকলে আর বাছাই করার সুযোগ থাকে না। তাদের চাহিদা পূরণে গাভিও জবাই করতে হয়। আর খিলপাড়া এলাকার জুয়েল মিয়া জানান, গাভি জবাই করলেও মাংসের মান ভালো। মানুষকে খারাপ জিনিস দেন না বলে দাবি করেন তিনি।
বাজারে এভাবে অনিয়ম করে মাংস বিক্রি হয় বলে স্বীকারও করে নিলেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শিখা বেগম। তিনি বলেন, ছাগি ও গাভির মাংসের দাম কিছুটা কম হবে। অনেক সময় খাসি পরিচয়ে ভেড়ার মাংসও বিক্রি হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে প্রমাণ করা যায় না বলে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ষাঁড় ও গাভির এবং খাসি ও ছাগির মাংসের দামে ৫০ থেকে ১০০ টাকা তারতম্য হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ীই গাভি বা ছাগির মাংসের কথা স্বীকারই করেন না। পরিদর্শনে গিয়েও পার্থক্য বোঝার উপায় থাকে না।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম দু’দিনে কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। অন্য মুরগির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। এর আগের কয়েক সপ্তাহে চড়েছে ব্রয়লার মাংসের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসার এ মুরগি ১৫০ থেকে উঠে যায় ২৫০ টাকা কেজিতে। তবে দু’দিনে ২০ টাকা কমে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার জেলা শহরের বড়বাজারের অন্তর ব্রয়লার হাউস, আব্দুল্লাহ ব্রয়লার হাউসসহ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে দাম কমতে শুরু করেছে। এদিন ২৪০ টাকা ও শুক্রবার আরও ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। তবে সোনালি ও লেয়ার মুরগির দাম ৩৫০ টাকা রয়ে গেছে।
গরুর মাংস এখনও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে, ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা জানান, অনেক জেলায় গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখানে গরুর দাম বেশি থাকার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ৫০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। কৃষি বিপণন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মাংসের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এরকম কোনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
শাক-সবজির দামেও অস্থিরতা চলছে। গত সপ্তাহের ৪০ টাকা কেজির বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ১৫ টাকার টমেটো এখন ২০-২৫ টাকা। লেবুর দাম কেজি হিসেবে স্থানীয়ভাবে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ছিল ৩০ টাকা। তবে ঢ্যাঁরসের দাম ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
তবে সবজির দাম সকালের তুলনায় বিকেলে কম ছিল। বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন ও আবু বকর সিদ্দিক জানান, সকালের ৬০ টাকার বেগুন বিকেলে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার শশা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। শুক্রবার বিকেলে ছিল ৪০ টাকা। কাঁচামাল মজুদের সুযোগ না থাকায় দাম আরও কমবে।
গৌরাঙ্গবাজার এলাকার একরামুল হক ও নিউটাউন এলাকার হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, ব্যবসায়ীরা রোজার আগেই দ্রব্যমূল্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন কিছু কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখলেও খুশি হবার কিছু নেই। ভোক্তাদের জীবনযাত্রার চাপ তাতে কমবে না। দ্রব্যমূল্য কমানো সরকারের মূল দায়িত্ব বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, ষাঁড় বলে গাভির মাংস বা খাসি বলে ছাগির মাংস বিক্রি করা প্রতারণামূলক অপরাধ। এ অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা এক মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। বাজার পরিদর্শনে গিয়ে এসব মাংসের পার্থক্য করা কঠিন। জেলায় ল্যাবের সুবিধা থাকলে প্রতারণা বা ভেজাল পরীক্ষা সহজ হতো।
মন্তব্য করুন