- সারাদেশ
- ‘ময়লাচক্রে’ নাজেহাল টঙ্গীবাসী
‘ময়লাচক্রে’ নাজেহাল টঙ্গীবাসী

এলাকাবাসীর ফেলা ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হতে চলেছে টঙ্গীর খাঁপাড়া এলাকার পুকুরটি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা - সমকাল
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গীর পরিচিতি শিল্পঘন এলাকা হিসেবে। ১৯৭৪ সালে ২৯ দশমিক ৭১ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি পৌরসভা। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে যুক্ত হয় পৌরসভাটি। ওই এলাকার কয়েক লাখ বাসিন্দাকে ডাস্টবিনের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হচ্ছে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলায় বেশিরভাগ এলাকাই একরকম ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিনে অন্তত ১৫০ টন বর্জ্য জমা হয় এখানে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এর বড় অংশ পড়ে নালায়।
দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশেই এখন আবর্জনার স্তূপ। সেখান থেকে উপচে বন্ধ হয়ে পড়ছে নালাগুলো। ফলে পানি চলাচল করতে পারছে না। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের জানালেও তাঁরা কার্যকর পদক্ষেপ নেন না।
স্থানীয় কয়েকজনের ভাষ্য, তাঁরা বাধ্য হয়ে নালা অথবা রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলেন। বর্ষায় অধিকাংশ নালা উপচে ময়লাসহ নোংরা পানি রাস্তা ও বাড়িঘরে ঢোকে। আর বছরজুড়ে আবর্জনার স্তূপের দুর্গন্ধে টেকাই কঠিন হয়ে পড়ে।
এর জন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে তাঁরা বলেন, বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের যে কয়টি গাড়ি রয়েছে, তা শুধু বড় রাস্তার পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যায়। আবাসিক এলাকার অলিগলিতে ঢোকে না।
ওইসব এলাকার ময়লা নিয়ে রয়েছে বাণিজ্যের অভিযোগ। কিছু ‘সামাজিক ও সেবামূলক’ সংগঠন ময়লা অপসারণে চালু করেছে ভ্যান সার্ভিস। এর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁর বাড়ির ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেন কর্মীরা। এ ছাড়া ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় ভ্যানে সংগৃহীত ময়লা ফেলা হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের হোসেন মার্কেট, দত্তপাড়া, মরকুন, স্টেশন রোড, গাজীপুরা ও টেলিফোন শিল্প করপোরেশনের সামনে।
গাজীপুরা এলাকার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শুনেছি এ ব্যাপারে নাকি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি রয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কোনো সুপারভাইজারকে আজ পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনার খোঁজ নিতে দেখিনি।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী ড্রেনের ময়লা অপসারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ফোন করে জানাতে হবে। তবে তাঁদের ফোনে পাওয়া যায় না বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
ময়লার বিষয়ে আগের ছয়টি সভায় ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে জানিয়েছেন– এমন দাবি করেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিউদ্দিন সফি। তিনি বলেন, আগামী বর্ষার আগে তাঁর ওয়ার্ডের নালাগুলো পরিষ্কার করা গেলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে জনগণ মুক্তি পাবে।
৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাস্টবিন দেওয়া হয়নি। কিছু লোক ও কোম্পানিকে ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ময়লা ফেলার সুপরিকল্পিত কোনো জায়গা নগরীতে নেই।
৪৯ নং ওয়ার্ডের ১ নম্বর ব্লকে থাকেন সানজিদা জেরিন সুমা। তিনি ওই এলাকার ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাধারণ সম্পাদক। সানজিদার ভাষ্য, ‘এ বিষয়ের দায় শুধু যে সিটি করপোরেশনের, তা নয়। যেহেতু এলাকা আমাদের, কিছু দায়বদ্ধতা আমাদেরও রয়েছে।’ মানুষের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, তিন মাস পরপর তাঁর সংগঠন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ক্যাম্পেইন চালায়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির টঙ্গী এলাকার সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, তাঁদের জনবল ও যানবাহনের সংকট রয়েছে। এ ছাড়া ময়লা ফেলার নির্ধারিত জায়গা না থাকায় বর্জ্য অপসারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে তাঁরা চেষ্টা করছেন।
মন্তব্য করুন