কৃষকদের সুবিধার জন্য মানিকগঞ্জের ঘিওরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নির্মিত একটি সেচপাম্প বছরখানেক ধরে অচল পড়ে আছে। ফলে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সদর ইউনিয়নের চর ঘিওর এলাকার শতাধিক কৃষক। তাঁদের সেচ পাওয়ার কথা ছিল স্বল্পমূল্যে।

সূত্র জানায়, ধান ও রবিশস্য আবাদে কৃষকদের সুবিধার জন্য ঘিওর সদর ইউনিয়নের পুরোনো ধলেশ্বররী নদীর উত্তর পাড় চর ঘিওর এলাকায় ‘সোলার প্যানেল সেচপাম্প’টি স্থাপন করে বিএডিসি। ২০২১-২২ অর্থবছরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এটি স্থাপনে খরচ হয় ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। ২০২২ সালে জুনে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্প খরচে অন্তত ৪৫ বিঘা জমিতে কৃষকদের সেচ সুবিধা পাওয়ার কথা। স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতির মাধ্যমে পাম্প পরিচালনার জন্য স্কিম ম্যানেজার ও কেয়ারটেকারকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এখনও সেটি চালু হয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, কৃষকদের ক্ষেতের আইলে বিএডিসি লোগো-সংবলিত একটি করে প্লাস্টিকের পাইপ। কয়েকজন কৃষকের অভিযোগ, কম মূল্যে সেচ সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিএডিসির লোকজন ইচ্ছামতো পাইপ বসিয়েছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন।

ওই এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বিদ্যুৎচালিত মোটর বসিয়ে নিজের তিন বিঘা ও অন্য কৃষকদের ১৭ বিঘা বোরো ধানের জমিতে পানি দিচ্ছি। বর্তমানে তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়তি।’ বিএডিসির ওই প্রকল্প থেকে সেচ না পেয়ে বাধ্য হয়ে এভাবে পানি দিতে হচ্ছে তাঁকে।

এ বিষয়ে কথা হয় একই এলাকার কৃষক জহির মিয়া ও  দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, প্রতি বিঘায় এক হাজার টাকা হারে সেচ খরচ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাম্পটি চালু না হওয়ায় বাড়তি খরচে বিদ্যুৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করেছেন তাঁরা। সোলার পাম্পটি চালু হলে এক ফসলি জমিতে দুটি ফসল ও দুই ফসলি জমিকে তিনবার ফসল উৎপাদনের আশা করছেন।

পাম্পটির কেয়ারটেকার দুলাল শিকদার বলেন, এ প্রকল্পের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো বেতন পাননি। পাম্পটি চালু না হওয়ায় কৃষকরা তাঁদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।

পাম্প পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকা স্কিম ম্যানেজার ও সমিতির কোষাধ্যক্ষ রুহুল খান বলেন, পাম্পটি চালুর জন্য কৃষকদের সঙ্গে কয়েকবার বসেছেন। একজন শ্রমিকও রাখা রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন দফা চেষ্টা করেও পাম্পটি চালু করা যায়নি। এ জন্য বিএডিসি কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করেন।

তবে জেলা বিএডিসি (সেচ বিভাগ) সহকারী প্রকৌশলী তিতাসের ভাষ্য, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় দুটি সোলার পাম্প রয়েছে। সেখানে কোনো সমস্য হয়নি। কিন্তু ঘিওরে কৃষকদের মধ্যে কোন্দল থাকায় পাম্পটি চালু করা যায়নি। এখন কৃষকদের মধ্যে কোন্দল মিটেছে। চলতি বছর বোরো মৌসুমের শুরুতেই পাম্পটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। মেকানিকরা দেখে গেছেন। তিনি আশা করছেন, দু-এক দিনের মধ্যে পাম্পটি চালু করা যাবে।