- সারাদেশ
- নওগাঁয় র্যাবের হাতে আটক নারীর হাসপাতালে মৃত্যু
নওগাঁয় র্যাবের হাতে আটক নারীর হাসপাতালে মৃত্যু

সুলতানা জেসমিন।
নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা গেছেন। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী ছিলেন। নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে বুধবার সকালে র্যাব তাঁকে আটক করেছিল।
নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার দাবি করলেও র্যাব তা অস্বীকার করেছে। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় জেসমিনের মাথার ডানপাশে আঘাত ছিল। ব্রেনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে সিটিস্ক্যান রিপোর্টে উঠে আসে।
জেসমিনের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, ১৮ বছর আগে জেসমিনের সঙ্গে তাঁর স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর এক সন্তান নিয়ে শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। তিনি ভূমি কার্যালয়ের সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তাঁর নামে কেউ দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ করেননি। বুধবার সকালে ফোন করে একজন বলল, কয়েকজন আপনার ভাগ্নিকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এর আড়াই ঘণ্টা পর তার ছেলে আমাকে ফোন করে বলে– র্যাব জানিয়েছে তার আম্মু অসুস্থ। তখন নওগাঁ হাসপাতালে গিয়ে দেখি স্যালাইন দিয়ে রেখেছে। র্যাবের লোকজন তখন আমার সঙ্গে কোনো কথা বলতে দেয়নি। তবে তিনি বেঁচে ছিলেন, এটা বুঝতে পেরেছি। আমার প্রশ্ন, সকাল ১০টায় তাকে নিয়ে গেল, নিয়ে কোথায় রেখেছিল? কী করেছিল? শুক্রবার মারা যাওয়ার পর র্যাবের লোকজনই রাজশাহীতে লাশের গোসল ও কফিন করেছে। তারাই দাফন করেছে। আমি মামা হিসেবে শুধু মুখটা একবার দেখেছি। মাটি দেওয়ার সময়ও সাদা পোশাকে র্যাব ছিল। পরে এলাকাবাসী তিন র্যাব সদস্যকে আটকে দিয়েছিল। পরে আমি তাদের ছাড়িয়ে দিয়েছি। শনিবার বাদ আছর তার দাফন করা হয়। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন কেন মারা গেল?
জেসমিনের ছেলে শাহেদ হোসেন বলেন, আমার মা চক্রান্তের শিকার। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তির সময় তাকে অচেতন অবস্থায় আনা হয়। তার মাথার ডানপাশে হালকা আঘাতের চিহ্ন ছিল। তখন র্যাব বলেছিল, তিনি পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। পরে তাকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে ব্রেনের ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়।
তিনি আরও জানান, জেসমিনের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। সঠিক কারণ জানতে হলে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
রাজশাহী র্যাবের অধিনায়ক নাজমুস সাকিব বলেন, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ছিল। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ব্যাংক হিসাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আসতো। ব্যাংক স্টেটমেন্টে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। প্রতারণার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। পরে তিনি ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে কেউ নির্যাতন করেনি। আগে থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
মন্তব্য করুন