কুসুম ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে। চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য ছাড়াও কুসুম ফুলের তেলে মানবদেহে জন্য উপকারী ভিটামিন-ই রয়েছে। এই ফুল দেশি-বিদেশি পাখির খাবার হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।

জানা গেছে, চরাঞ্চলের বালু মাটিভরা পড়ে থাকা পতিত জমিতে কোনো কিছুই চাষাবাদ হতো না। চাষাবাদের আগ্রহও ছিল না কারও। কিন্তু এসব অনাবাদি জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করে কৃষকরা সফলতা পাওয়ায় এখন অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কুসুম ফুল চাষে।

চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে কুসুম ফুলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মজিবর মোল্লা ও মইনুল বেপারী। তারা দুইজনে মোট পাঁচ বিঘা জমিতে এই কুসুম ফুলের চাষ করেছেন।

সরেজমিনে চরাঞ্চলের মজিবর মোল্লা ও মইনুল বেপারীর কুসুম ফুলের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই থেকে সাড়ে তিন ফুট লম্বা গাছের পাতা ও কাণ্ডের রং গাঢ় সবুজ। প্রতিটি গাছে ফুটে আছে সাদা, হলুদ, লাল ও খয়েরিসহ ৭ রঙের পাপড়িযুক্ত ফুল। কুসুম ফুলের হলুদ ও লাল রঙ আর মিষ্টি মৌ মৌ গন্ধ শুধু মানুষকেই নয় উপকারী কীটপতঙ্গকেও আকৃষ্ট করছে। কুসুম ফুলের কাণ্ড, পাতা ও কলিতে ছোট ছোট কাঁটা রয়েছে। বাহারি এসব ফুলের পাপড়ি দেখতে অনেকটা পাখির কচি পাখনার পালকের মত তুলতুলে।

ফুলচাষীরা জানান, এ ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল প্রাকৃতিক ও উন্নত মানের ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহারে খ্যাতি রয়েছে। এটি একটি তেলবীজ শস্য। গ্রামের ভাষায় এটাকে ফুলবিচিও বলে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলা হয় কুসুম ফুল। তবে কালের আবর্তনে এখন এ ফুলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।

এ সময় কথা হয় কুসুম ফুল চাষি মজিবর মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, এ জমি আগে পড়েই থাকত। কৃষি অফিসের পরামর্শে তিন বিঘা জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করেছেন। কুসুম ফুলের চাষে তার তেমন কোনো খরচ হয়নি। অন্য ফসলের মতো সার কীটনাশক বা পরিচর্যা করতে হয় না। তেমন কোনো রোগবালাইও নাই। শুধু জমি চাষ দিয়ে বীজ বপন করলেই হয়ে যায়। বপনের চার মাসের মধ্যেই কুসুম ফুল ঘরে উঠে। বাজারে এর চাহিদাও বেশ ভালো।

ফুল চাষি মজিবর মোল্লা আরও জানান, প্রতি বিঘাতে ৫-৬ মণ কুসুম ফুলের বীজ পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ কুসুম ফুলের বীজ ৫-৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কুসুম ফুল চাষি মইনুল বেপারী জানান, এই প্রথম তিনি কুসুম ফুলের চাষ করেছেন। জমিতে বীজ বপন করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। প্রতি বিঘাতে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। তিনি দুই বিঘা জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করেছেন।

মইনুল বেপারী আরও জানান, লাল, হলুদ, গোলাপি, সোনালি, মেজেন্ডাসহ বাহারি রঙের কুসুম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে তার জমিতে ভিড় করছেন। এরই মধ্যে নতুন এ ফুল চাষ দেখে অনেক কৃষকই কুসুম ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে তার কাছে বীজ চেয়েছেন। ফুলের বীজ থেকে তেলের উৎপাদনের পাশাপাশি কুসুম ফুলের বীজ পাখিদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ কারণে যারা পাখির ব্যবসা করেন তারাও এই ফুলের বীজ কিনতে আগ্রহী বলেও জানান এই ফুলচাষী।

তিনি জানান, এবার লাভ হলে আগামীতে আরো বেশি জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করবেন তিনি।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. হারুনুর রশিদ জানান, এবার ফরিদপুর সদরে ১১০ হেক্টর জমিতে কুসুম ফুলের চাষ করা হয়েছে, আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তা ড. হারুনুর রশিদ আরও জানান, চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বেশ কয়েকজন কৃষক তেল জাতীয় ফসল কুসুম ফুলের চাষ শুরু করেছেন। এই ফুলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম, আবার খরচও কম। এ কারণে  অনাবাদি জমির জন্য কুসুম ফুলের চাষ বেশ লাভজনক। বাজারে চাহিদা ভালো থাকলে কুসুম ফুলের চাষ আগামীতে আরও বাড়বে। আগ্রহী কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।


বিষয় : চর মাধবদিয়া কুসুম ফুল

মন্তব্য করুন