খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর। ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪৩টি সড়কের কাজ চলছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সড়কের কাজে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্ধ সহস্রাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ও সড়কবাতি।

প্রকল্পে সড়কের খুঁটি স্থানান্তরের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। খুঁটি নিয়ে আগাম কোনো পরিকল্পনাও কেসিসির ছিল না। সড়কে খুঁটি রেখেই কাজ শুরু করে কেসিসি। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে খুঁটি স্থানান্তর শুরু হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সেই কাজে গতি নেই। ভাঙাচোরা সড়কে দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের।

খুলনা নগরীর বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, সড়কের বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে আগে থেকে জানাতে হয়। স্থানান্তরের খরচ জমা দিলে তারপর ওজোপাডিকো কাজ শুরু করে। কিন্তু সাড়ে চার বছর আগে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও কেসিসির পক্ষ থেকে খুঁটি স্থানান্তরের বিষয়ে আগাম কিছুই জানানো হয়নি। একাধিক সড়কে শত শত খুঁটি রাতারাতি সরানো সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি রোড, পুরোনো যশোর রোড, কেডি ঘোষ রোড, বাগমারা রোড, গগন বাবু রোড, জিন্নাহপাড়া ও গোয়ালখালী সড়ক প্রশস্তকরণের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। এর মধ্যে শুধু খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে খুঁটি পড়েছে ৫ শতাধিক। সড়কগুলোর কিছু  খুঁটি স্থানান্তর করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিআইডিসি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু আগের বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সড়কেই রয়েছে। রয়েছে ট্রান্সফরমারও। সড়কটিতে এখন সাববেজের কাজ চলছে। গাবতলা মোড়ে সড়কের মাঝ থেকে কিছু খুঁটি সরানো হয়েছে। গৌতমের মোড়, পাওয়ার হাউসের দক্ষিণ পাশে ও পদ্মার মোড়ে খুঁটি রেখেই কাজ হচ্ছে। খুঁটির কারণে কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। দেখা গেছে, পুরোনো যশোর রোডে কেসিসির সড়ক বাতি পড়েছে সড়কের বর্ধিত অংশে। তবে ইতোমধ্যে অনেক খুঁটি তুলে ফেলা হয়েছে।

বিআইডিসি সড়কের গৌতমের মোড়ের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, খালিশপুরবাসীর কষ্টের নাম বিআইডিসি রোড। কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা। কেসিসি কাজ শুরু করার পর কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু কাজে গতি নেই। প্রতিদিন চলাফেরায় যে কী কষ্ট– এটা বোঝাতে পারব না।

বিআইডিসি সড়ক (গাবতলা থেকে পাওয়ার হাউস পর্যন্ত) সংস্কারের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চুক্তিতে খুঁটি সরানোর জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। খুঁটি রেখে কাজও করা যাচ্ছে না। তাই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খুঁটি স্থানান্তর করছি। ইতোমধ্যে ১০-১৫টি খুঁটি সারানো হয়েছে। এখনও প্রায় ১৭০টি খুঁটি বাকি রয়েছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে সরানো হবে।

কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান সমকালকে বলেন, সড়কের মাঝখানের খুঁটি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব খুঁটি সরানো হবে। তিনি বলেন, বিআইডিসিসহ অনেক সড়ক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ জন্য আগাম পরিকল্পনা বা খুঁটির জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা যায়নি। প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে, এতে খুঁটি অপসারণের ব্যয় যুক্ত করা হবে।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে অন্তত তিন মাস আগে জানাতে হয়, খরচের টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু কেসিসি এর কিছুই করেনি। তার পরও আমরা আলোচনার মাধ্যমে খুঁটি সরিয়ে নিচ্ছি।