র‍্যাব হেফাজতে নওগাঁর সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন সামনে এনেছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। মামলার আগে তাঁকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করছে তারা।
এদিকে হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত র‍্যাব সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি তাঁর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করা হয়েছে।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) আবুল কালাম খান দাউদকে আজ মঙ্গলবার প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। 

গতকাল ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, র‍্যাব হেফাজতে সুলতানার মৃত্যুর ঘটনা মানবাধিকারের মূলনীতি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও আইনের লঙ্ঘন। এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের নিকৃষ্ট উদাহরণ।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্‌দীন মালিক সমকালকে বলেন, ‘মামলা ছাড়া হুট করে কোনো ব্যক্তিকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া সংবিধান ও আইনের পরিপন্থি। ইদানীং অনেক ঘটনায় ইউনিফর্ম বা সাদা পোশাকে নাগরিকদের তুলে নেওয়ার (আটক) ঘটনা গণমাধ্যমে আসছে। এতে ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে– র‍্যাব ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ রেগুলেশন্স বেঙ্গলসহ ফৌজদারি আইনকানুনের তোয়াক্কা করছে না। র‍্যাব নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ বাহিনী। তাদের কার্যক্রম অবশ্যই জঙ্গি, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বোমাসহ ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়।’
এর আগে গত ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় র‍্যাবের অভিযানের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন।

সুলতানা নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী ছিলেন। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার সময় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে র‍্যাব। ওই দিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের লোকজন জানতে পারেন সুলতানা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। স্বজনের অভিযোগ, র‍্যাব হেফাজতে নির্যাতনের কারণে সুলতানা মারা গেছেন। তবে র‍্যাব এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। তারা বলছে, সুলতানার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগ পায় র‍্যাব। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। 

সুলতানা জেসমিনের মাথায় আঘাত থাকা নিয়ে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছে র‍্যাব। যদিও সোমবার রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ আবারও বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে ভর্তির সময় সুলতানা জেসমিনের মাথার ডানপাশে ঘষা টাইপের হালকা আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভর্তির সময় র‍্যাব বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। এটা তাঁর ভর্তির সময় দেওয়া তেথ্যও আছে। পরে তাঁকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ব্রেইনের ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। এটা আঘাতের কারণেও হতে পারে। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

অভিযানে ছিলেন যুগ্ম সচিব : সমকালের তথ্যানুসন্ধানে সুলতানাকে আটকের সময় র‍্যাবের সঙ্গে অভিযানে ছিলেন রাজশাহী বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। কোনো মামলায় নয়; এনামুলের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করা হয়। আটকের এক দিন পর রাজপাড়া থানায় মামলা করা হয়। সুলতানা ও আল আমিন নামে দু’জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যুগ্ম সচিব।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে– অধীনস্থ একজন ছোট পদের কর্মীকে আটকের জন্য র‍্যাবের সঙ্গে নওগাঁয় কেন গেলেন যুগ্ম সচিব মর্যাদার একজন কর্মকর্তা? এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব এনামুল হক সমকালকে বলেন, ২০১৭ সালে নাটোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। তখন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়। এর পর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু সেটি উদ্ধার করতে না পেরে তিনি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি রাজশাহী বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক পদে যোগদান করেন। এর পর গত বছরের ২২ মার্চ তিনি রাজপাড়া থানায় একটি জিডি করেন। তাঁর অভিযোগ, পুরোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তাঁর ছবি ও যুগ্ম সচিব পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। পরে তিনি র‍্যাবকে অভিযোগ করেন। বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে যে নম্বরে টাকা নেওয়া হয়, তার সূত্র ধরে র‍্যাব সুলতানা জেসমিন ও চাঁদপুরের হাইমচরের আল আমিনকে শনাক্ত করে। পরে র‍্যাবের একটি দল বুধবার সকালে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে আটক করে। পরদিন ২৩ মার্চ তিনি সুলতানা জেসমিন ও আল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

যুগ্ম সচিব এনামুল হক দাবি করেন, যখন জানতে পারি, আমার স্টাফ হয়েও একজন প্রতারকের সঙ্গে মিলে মানুষকে প্রতারিত করছেন; বিভিন্নজনের কাছ থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছিল, তখন মূল হ্যাকারকে ধরতেই প্রথমে সুলতানাকে আটক করা হয়। তিনি দাবি করেন, আমার উপস্থিতিতেই র‍্যাব সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে; কোনো মারধর করেনি। আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন সুলতানা। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। র‍্যাব আটকের পর তিনি আতঙ্কে স্ট্রোক করে মারা যান। তিনি কীভাবে সুলতানার অসুস্থতার খবর রাখলেন, তা অবশ্য পরিষ্কার করা হয়নি।
র‍্যাবের অভিযানে কেন ছিলেন– জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘আমি আমার অফিসের কাজে নওগাঁ গিয়েছিলাম। হঠাৎ র‍্যাব সামনে পড়ে যায়। যেহেতু র‍্যাবের সঙ্গে আগে থেকেই আমার এ বিষয়ে যোগাযোগ ছিল, তাই ছিলাম। পরে আমার উপস্থিতিতেই সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় সুলতানা স্বীকার করেছেন– আমার ছবি ও পদবি ব্যবহার করে অপর আসামি আল আমিনের মাধ্যমে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতেন।’ এর পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সুলতানার জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, স্টাফ হলেও প্রতারক আল আমিনের সঙ্গে তিনি বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। র‍্যাবের সহকারী পরিচালক ডিএডি মো. মাসুদের নেতৃত্বে টহল টিম তাঁকে গাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। সেখানে ভয় পেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান সুলতানা। পরে তাঁকে নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তিনি মারা যান। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আখতার তাঁর সুরতহাল করেন। তাঁর সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধু ডান হাতের কনুইয়ের উল্টো পাশে কালশিটা দাগ ছিল। এটা স্যালাইন ও রক্ত দেওয়ার কারণে। তিনি দাবি করেন, তাঁর মাথায় কোনো আঘাত ছিল না। হাসপাতাল পরিচালক কেন বলছেন মাথায় আঘাত– তা বুঝতে পারছি না। তিনি জানান, প্রতারক আল আমিন প্রতারণা করে সুলতানার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিত। সুলতানা সেই টাকার কিছু অংশ আবার তাকে বিকাশ ও রকেটে ফেরত দিতেন।

র‍্যাব যা বলছে : এদিকে র‍্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার সমকালকে জানান, সুলতানাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তাঁকে ক্যাম্পেও নেওয়া হয়নি। নওগাঁয় র‍্যাবের ক্যাম্প নেই। এ কারণে তাঁকে আটকের পর গাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। র‍্যাব তাঁর ফোন সেটটা নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু তিনি দিতে চাননি। র‍্যাবের মনে হয়েছে, ফোন সেটটি পেলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। র‍্যাবের কাছে আগেই তথ্য ছিল– তাঁর অ্যাকাউন্টে ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা আছে। সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট রয়েছে। সেই স্টেটমেন্ট চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি তা দিতে রাজি হননি। তবে সুলতানা সুলতানার অ্যাকাউন্টে দুটি ভাউচারে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার রসিদ দেন। এতে দেখা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি এসএম আবদুল্লাহ/সউদ তালুকদার কালাই, জয়পুরহাট শাখা থেকে সুলতানা সুলতানার সোনালী ব্যাংকের মহাদেবপুর শাখার অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা করেছেন। কালাই শাখা থেকে আবুল হাসনাত নামে আরেক জন গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ টাকা জমা করেছেন সুলতানার অ্যাকাউন্টে।

মামলা ছাড়াই কেন তাঁকে আটক করা হলো– জানতে চাইলে র‍্যাব কর্মকর্তা রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘তখন মামলা হয়নি। যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগ পেয়ে র‍্যাব তাঁকে আটক করে। আটকের সময় অভিযানে যুগ্ম সচিব এনামুল হক নিজেই ছিলেন। পরদিন তিনি মামলা করেছেন। যেহেতু বাদী সঙ্গে ছিলেন, তাই মামলা রেকর্ডের আগেও আসামিকে আটক করা যায়।’ অভিযানে কারা ছিলেন– জানতে চাইলে রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘এটা বলা সম্ভব নয়। এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। তিনি দাবি করেন, সুলতানাকে কোনো আঘাত করা হয়নি। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তখন তিনি বারবার বলছিলেন, এসব বিষয় যেন তাঁর ছেলে জানতে না পারে।

গ্রেপ্তারকৃতদের আইনি অধিকার: দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল ২০২২ সালেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আইনি অধিকার নিয়ে এর আগে আদালত বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন। সেখানে বলা হয়– গ্রেপ্তারের সময় যদি কোনো ব্যক্তির বন্ধু বা নিকটাত্মীয় পাশে না থাকেন, তবে দ্রুত তাঁর স্বজন বা বন্ধুদের গ্রেপ্তারের তারিখ, সময় ও হেফাজতে রাখার স্থান (থানার নাম) অবহিত করতে হবে। এটা গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি পর্যায়ের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রণীত সরকার চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা অনুযায়ী, সরকারি দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে কোনো কর্মচারীকে আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে গ্রেপ্তার করতে হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গতকাল সোমবার সমকালকে বলেন, সুলতানা জেসমিন নওগাঁর চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এমএলএসএস (মেম্বার অব লোয়ার সাবঅর্ডিনেট স্টাফ) ছিলেন। তাঁকে আটক করার দিন এ বিষয়ে আমাকে বা আমার ঊর্ধ্বতন কোনো অফিসারকে কারও পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

মামলা হয়নি কেন: সুলতানার মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। শুনানিতে এ ঘটনায় মামলা দায়ের না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, চার দিন পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি কেন? পরিবারের সদস্যরা মামলা করেনি তো কী হয়েছে? রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই? অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র মামলা করতে পারে। অভিযোগ উঠেছে– র‍্যাবের হেফাজতে এই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তাঁর মৃত্যু বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গতকাল ওই প্রতিবেদনগুলো আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। তিনি আদালতে বলেন, বুধবার তাঁকে আটক করে হেফাজতে নেয় র‍্যাব। আটক করার ৩১ ঘণ্টা পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর হেফাজতে নেওয়ার পর অসুস্থ হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ– ওই নারীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ সত্য হলে এটি খুবই গুরুতর অভিযোগ। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ। তাঁর উদ্দেশে এ সময় হাইকোর্ট বলেন, এই মুহূর্তে খোঁজ নেন– কোনো মামলা হয়েছে কিনা। ১৫ মিনিটের মধ্যে খোঁজ নিয়ে জানান।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনারের কাছে খোঁজ নেওয়ার পর সহকারী আইন কর্মকর্তা দাউদ আদালতে বলেন, গত ২৪ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা– আদালত জানতে চাইলে আবুল কালাম খান দাউদ বলেন, নিহতের পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেননি। এ কারণে রাষ্ট্রও মামলা করেনি। এ সময় হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করেন। মাথায় আঘাতের বিষয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে– আদালত তা জানতে চাইলে আবুল কালাম খান দাউদ বলেন, ‘এ বিষয়গুলো জানতে হলে সময় দিতে হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি আনতে হবে।’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘এখনই ফ্যাক্স করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বলেন। পত্রপত্রিকায় এসেছে– ওই নারীর মাথায় আঘাতের কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পত্রিকার প্রতিবেদন ধরে তো আর বিচার করা যাবে না। আমাদের দেখতে হবে– আগে থেকেই মাথায় ইনজুরি ছিল কিনা, নাকি নতুন ইনজুরি হয়েছে এবং সে ইনজুরির কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা। কেন তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল; কারা হেফাজতে নিয়েছিল; কে বা কারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; নাম-পদবিসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে আমাদের জানান।’

রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘দেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে দেখতে যে, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন কিনা। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে মিলেই তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র বিচার না; ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা ন্যায়বিচার করতে চাই।’




বিষয় : মামলার আগে আটক নিয়ে নানা প্রশ্ন মামলার আগে আটক র‍্যাবের হাতে আটক নারীর মৃত্যু

মন্তব্য করুন