- সারাদেশ
- ঢাকার জেলা জজের কাছে সালিশকারী নিয়োগের তালিকা তলব হাইকোর্টের
ঢাকার জেলা জজের কাছে সালিশকারী নিয়োগের তালিকা তলব হাইকোর্টের

সালিশি মামলাগুলোতে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজের নিয়োগ করা সালিশকারীদের যাবতীয় তথ্য তলব করেছেন হাইকোর্ট। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজকে ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে এ তথ্য দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারিসহ এই আদেশ দেন। গত ১৪ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া এই আদেশের অনুলিপি চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।
রুলে মামলার বাদীপক্ষ থেকে মনোনীত সালিশকারী অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মুজিবুল কামালের পরিবর্তে মঞ্জুরুল বাসিদকে সালিশকারী নিয়োগ করে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গত ১৫ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোন কর্তৃত্ববলে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মামলার আবেদনকারী পক্ষ থেকে মনোনীত সালিশকারী (আরবিট্রেটর) পরিবর্তন করেছেন, তাও পৃথক জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ূম খান লিটন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন হওয়ার পর আজ পর্যন্ত এ আইনের কোনো বিধিমালা হয়নি। আইনের ১২ ধারায় বলা আছে কীভাবে সালিশকারী নিয়োগ হবে। পক্ষগণ তাদের চুক্তি অনুযায়ী সালিশকারী নিয়োগ করতে পারে। তিনজনের আরবিট্রেশন হলে প্রত্যেক পক্ষ থেকে একজন করে সালিশকারী নিয়োগ করবে। কোনো পক্ষ তার নিজের সালিশকারীর নাম প্রস্তাব করে অন্যপক্ষকে তার সালিশকারী নিয়োগের আহ্বান জানাবে। সেক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে কোনো পক্ষ সালিশকারী নিয়োগে ব্যর্থ হলে, অন্যপক্ষ জেলা জজের কাছে আবেদন নিয়ে যায়। তখন জেলা জজ যে পক্ষ সালিশকারী নিয়োগ দেয়নি, সেই পক্ষে একজন সালিশকারী নিয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জেলা জজ কাকে সালিশকারী নিয়োগ করবে আইনে, তা স্পষ্ট বলা নেই। এ কারণে জেলা জজের নিজের ইচ্ছামতো সালিশকারী নিয়োগের সুযোগ আছে। এজন্য জেলা জজ কাকে সালিশকারী নিয়োগ করবেন, তার একটা তালিকা থাকা দরকার। মেডিয়েটর নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন তালিকা থাকে; কিন্তু সালিশের ক্ষেত্রে নেই।
তিনি আরও বলেন, যেখানে কোনো একটি পক্ষ আইন অনুযায়ী তার সালিশকারী নিয়োগ দেয়, সেখানে অন্য একটি পক্ষ সালিশকারী নিয়োগ না করলে হয়তো কোর্টে যাচ্ছে, তখন আদালত পক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত সালিশকারীকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তার ইচ্ছামতো নিয়োগ করছে। সুবাস্তু ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পরিচালকদের একটি বিরোধ সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার চুক্তি আছে। এখানে আমার মক্কেলের পক্ষ থেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকে সালিশকারী নিয়োগ করা হয়। অন্যপক্ষ ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগ না করায় আমরা আদালতে যাই। তখন আদালত অন্যপক্ষ যারা সালিশকারী নিয়োগ করেনি, তাদের পক্ষে একজন সালিশকারী নিয়োগ করলেন। একই সঙ্গে আমাদের নিযুক্ত সালিশকারীকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে আমাদের সালিশকারী নিয়োগ করলেন। এটা আইনের লঙ্ঘন। আমরা হাইকোর্টে এটা চ্যালেঞ্জ করেছি। হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। আগামী ২৯ মার্চ বিষয়টি পরবর্তী শুনানির জন্য আছে।
এর আগে গত ৫ মার্চ অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে ঢাকার জেলা জজের বিরুদ্ধে আরবিট্রেটর নিয়োগে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ দাখিল করেন। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও রিটায়ার্ড জাজেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মাহমুদুল কবির ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদার এ অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান ঢাকা জেলা জজ আদালতে যোগদানের পর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদকে প্রায় ১০০টি মোকদ্দমায় আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছেন। এসব মামলায় জেলা জজের সঙ্গে যোগসাজশে তার বিশ্বস্ত দুই থেকে চারজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকেই আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করান মঞ্জুরুল বাছিদ। তারা আবার পরে বাছিদকেই আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেন। এভাবে তিনি কখনো আরবিট্রেটর বা চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা জজ আদালতের নিয়োগ করা ১৫ শতাংশ আরবিট্রেশন মোকদ্দমায় যুক্ত থাকেন। আর কোনো আরবিট্রেটর মঞ্জুরুল বাছিদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে অসম্মতি জানালে তাদের পরে আর আরবিট্রেটর হিসেবে নিয়োগ করা হয় না। জেলা জজের এমন আচরণে অনেকে তাকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে বাধ্য হন। ফলে জেলা জজ ও মঞ্জুরুল বাছিদ ‘আরবিট্রেশন সিন্ডিকেট’ হিসেবে পরিচিত।
মন্তব্য করুন