কক্সবাজারে চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়খেকোরা। এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে পাহাড় কাটার উৎসব। তবে এবার কৌশল পরিবর্তন করে দিনের পরিবর্তে রাতে চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত বিনা বাধায় পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা।
বন বিভাগ জানিয়েছে, পাহাড় কাটার বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, তারা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
জানা যায়, চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার আগে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল মৌজায় সংরক্ষিত বনে অন্তত ১০টি পাহাড় কাটা হচ্ছে। ২০০ থেকে ৩০০ ফুট উঁচু এবং ১০০ থেকে ২০০ একর আয়তনের পাহাড়গুলোর তিনটি এরই মধ্যে সাবাড় হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, সংরক্ষিত বনের পাহাড় কাটা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রতিবেদন কক্সবাজার কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহাড় কাটা রোধে বন বিভাগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিবেদন পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অবহেলার কারণে প্রায় ৮০০ একরের সংরক্ষিত বনের পাহাড় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা পাহাড়খেকোদের কাছ থেকে মাসোহারা পান। এ কারণে প্রভাবশালীরা নতুন করে পাহাড় কাটার সাহস দেখাচ্ছে।
পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দীন সমকালকে বলেন, ফাঁসিয়াখালীতে বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এরই মধ্যে বন বিভাগের সাঁড়াশি অভিযানে কিছুদিন বন্ধ ছিল। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বিষয়টি চকরিয়া ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার মাটিসহ একটি ট্রাক জব্দ করে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এদিকে সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনকে চিঠি দিয়েছেন ইউএনও। রাতে নিরাপত্তা টহল নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাদুজ্জামান বলেন, ফাঁসিয়াখালীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু মেশিনও জব্দ করা হয়। নতুন করে পাহাড় কাটা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাঁসিয়াখালীতে পাহাড় কাটা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন বিভাগের দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে এক মামলায় বন বিভাগ পক্ষে রায় পেয়েছে। অন্য মামলাটি এখনও চলমান।
জানা যায়, গণমাধ্যমে পাহাড় কাটার ব্যাপারে তথ্য দেওয়ায় স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ইউনুস নামের এক দিনমজুরকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই ব্যক্তির বোন গত ১২ মার্চ মামলা করেন। মামলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ আকবর শামীম এবং চেয়ারম্যানের ভাই এখলাস উদ্দিনসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারক নিরপেক্ষ তদন্ত করে আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।