- সারাদেশ
- নিশানা উড়িয়ে ঝুঁকিতে পারাপার
নিশানা উড়িয়ে ঝুঁকিতে পারাপার

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের হরতুকিচালায় নিশানা উড়িয়ে শ্রমিকদের সড়ক পার করা হচ্ছে সমকাল
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরে প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে ঢালাই দেওয়া বিভাজক রয়েছে। কোনাবাড়ী কলেজগেট থেকে কালিয়াকৈরের স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস পর্যন্ত সড়কে পথচারী পারাপারে রয়েছে ১০টি ফুট ওভারব্রিজ। কিন্তু বিভাজকের অন্তত ৩১ জায়গায় ফাঁকা রয়েছে। এ স্থান দিয়ে হাজারো শ্রমিক ও পথচারী ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হওয়ায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কের এ অংশে আটটি ইউটার্ন, ১০টি ফুট ওভারব্রিজ, দুটি ফ্লাইওভার ও দুটি আন্ডারপাস আছে। স্থানীয়রা জানান, কারখানার শ্রমিকরা অনেক ফাঁকা বা কাটা স্থান দিয়ে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে সড়ক পার হন। হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপথ
বিভাগ এভাবে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, কোনাবাড়ী কলেজগেট এলাকার ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও সার্ভিস সড়ক দখল করে পরিত্যক্ত মালপত্রের ব্যবসা করা হয়। ফলে বিভাজকের ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছেন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। পাশের তেলিরচালা ও মৌচাক এলাকায় ২০-২২টি পোশাক কারখানার লক্ষাধিক শ্রমিক সড়ক পার হয়ে কর্মস্থলে যান।
লৌহাকৈর মাজার সড়ক মোড়ের আরেকটি ফুট ওভারব্রিজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে পাঁচটি ফাঁকা জায়গায় লাল নিশানা দিয়ে যানবাহন থামিয়ে শ্রমিকদের পার করেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তেলিরচালা এলাকার কারখানার শ্রমিক মতিউর রহমান ও রিনা পারভীন জানান, ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে কর্মস্থলে যেতে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরতে হয়। তাই সড়কের মাঝ দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
আরেকটি কারখানার শ্রমিক জয়নাল আবেদিন, লায়লা বানু ও জয়তুন নেছা জানান, চার কিলোমিটার দূরত্বে দুটি ফুট ওভারব্রিজ আছে। দুই কিলোমিটার ঘুরে সেই ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে আরও দুই কিলোমিটার এসে কারখানায় ঢুকতে হয়। নিরাপত্তার ঘাটতি থাকলেও সময় বাঁচাতে পার হন।
লৌহাকৈর মাজার সড়ক মোড়ে থেকে দোকানপাড় পর্যন্ত আরেকটি ফুট ওভারব্রিজ শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করলেও শত শত শ্রমিক বিভাজকের মাঝ দিয়ে পার হচ্ছেন। দোকানপাড় এলাকার ফুট ওভারব্রিজটি কেউ ব্যবহার করেন না। দুটি ফাঁকা স্থান দিয়ে শ্রমিকরা সড়ক পার হন। লৌহাকৈর মাজার মোড় থেকে সফিপুর ফ্লাইওভার পর্যন্ত সাত-আটটি স্থান দিয়ে শ্রমিকরা এভাবে যাতায়াত করছেন।
সফিপুর ফ্লাইওভারের পশ্চিম থেকে চন্দ্রা ত্রিমোড়ের ফরেস্ট অফিস-সংলগ্ন দুটি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এ এলাকায় শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা আছে। বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানেও লাখো শ্রমিক কর্মরত আছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকও সড়ক পার হয়ে কারখানায় যান।
হরিণহাটি এলাকায় লাল নিশানা উড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে কয়েকশ শ্রমিককে সড়ক পার করে দিচ্ছিলেন নিরাপত্তাকর্মী আবু সিদ্দিক। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাতে দুর্ঘটনায় না পড়ে, সে জন্য গাড়ি থামিয়ে চারবার পার করা হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ বাজার এলাকার পশ্চিমের ফুটওভার ব্রিজটি অনেক শ্রমিক ব্যবহার করলেও বেশিরভাগই বিভাজকের ওপর দিয়ে লাফিয়ে সড়ক পার হন। জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক, পথচারী, শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি ফয়সাল হোসেন (৪০) নামে এক পথচারী নিহত হন। ২২ জানুয়ারি পাথরভর্তি ট্রাক নিরাপত্তাকর্মী আজাদুল ইসলামকে চাপা দিলে তিনি প্রাণ হারান। ২৫ জানুয়ারি তেলিরচালায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাতপরিচয় নারী (২১) শ্রমিক নিহত হন। ২ মার্চ নিশ্চিন্তপুর দোকানপাড় এলাকায় কহিনুর আক্তার (২৫) প্রাণ হারান। খাড়াজোড়া এলাকায় গত ১০ মার্চ ট্রাকের ধাক্কায় দম্পতি নিহত হন। তাঁরা হলেন আব্দুল ওহাব আকন্দ (২৪) ও তাঁর স্ত্রী তামান্না আক্তার (২২)। ২৩ মার্চ চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ট্রাকচাপায় সাব্বির হোসেন (২৩) নামের কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। ছয় মাসে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ বলছে, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও শ্রমিকরা বিভাজকের ফাঁকা জায়গা দিয়ে সড়ক অতিক্রম করেন। লাল নিশানা দিয়ে যানবাহন থামিয়ে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পার করে দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এতেও ঝুঁকি রয়েছে।
একটি কারখানার নিরাপত্তাকর্মী লতিফ মিয়া বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে লাল নিশানা দিয়ে শ্রমিক পার করাতে গেলে এক নিরাপত্তাকর্মীকে পাথরভর্তি ট্রাক চাপা দেয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মহিষবাথান এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও আশপাশের শিল্পকারখানা নেই। আধাকিলোমিটার উত্তরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। সেখানেও পথচারীদের যাতায়াত কম। বোর্ডঘর এলাকার ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে মানুষ যাতায়াত না করে বিভাজকের ফাঁকা স্থান দিয়ে পার হন। সূত্রাপুর এলাকার ওভারব্রিজটি কিছু শ্রমিক ব্যবহার করেন।
সালনা (কোনাবাড়ী) হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, এভাবে মহাসড়ক পার হওয়ায় অনেক শ্রমিক ও নিরাপত্তাকর্মী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। লাল নিশানা ওড়ানো বন্ধের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন