- সারাদেশ
- নিহত শহীদুল ও হেলালের বাড়ি নোয়াখালীতে, তাদের আয়ে চলতো সংসার
সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনা
নিহত শহীদুল ও হেলালের বাড়ি নোয়াখালীতে, তাদের আয়ে চলতো সংসার

মো. হেলাল উদ্দিন ও মো. শহীদুল ইসলাম
সৌদি আরবে ওমরাহ হজ করতে যাওয়ার সময় বাস দুর্ঘটনায় নিহত আট বাংলাদেশির মধ্যে দুজনের বাড়ি নোয়াখালীতে। এর মধ্যে নিহত মো. হেলাল উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে ও মো. শহীদুল ইসলামের বাড়ি সেনবাগে।
সোমবার ইয়েমেন সীমান্তবর্তী সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। তারা ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই দুই পরিবারের ভবিষ্যৎ। তাদের মৃত্যুতে বাবা-মা ও স্ত্রীসহ স্বজনদের কান্না যেন কিছুতেই থামছেনা। দুই পরিবারেই চলছে শোকের মাতম।
নিহতরা হলেন- জেলার চাটখিল উপজেলার ২ নং রামনারায়ন পুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রামনারায়ণপুর গ্রামের ভূঁইয়াজি বাড়ির মৃত মো. হুমায়ুন কবিরের ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন (৩৫) ও সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মোহাম্মদপুর মালেক মোল্লার বাড়ির শরিয়ত উল্লাহর ছেলে মো. শহীদুল ইসলাম ওরেফ শাহেদ (২৭) ।
নিহত মো.হেলাল উদ্দিনের চাচা ও স্থানীয় রামনারায়ন পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম সাব মঙ্গলবার মধ্যরাতে জানান, হেলাল বিএ পাশ করে বেশ কয়েক বছর একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। করোনা মহামারি চলাকালীন তিনি চাকরি হারিয়ে বেকার জীবনযাপন করেন। এর পর জীবিকার তাগিতে ও পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে এক বছর একমাস আগে পরিবারের বড় ছেলে মো. হেলাল উদ্দিন সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি সৌদি আরবের আবা সিটিতে একটি রেঁস্তেরায় চাকরি নেন।
মো.হেলাল উদ্দিনের চাচা আরও জানান, হেলালসহ আরো চারজন ওমরাহ করার জন্য এক সঙ্গে মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রা পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনই মারা যান। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে গণমাধ্যমে হেলালের মৃত্যুর বিষয়টি তারা জানতে পারেন। নিহত ৮জনের তালিকার মধ্যে তিন নম্বরে হেলালের নাম ছিল।
নিহতের চাচা জানান, সংসারে হেলালের মা খুকী বেগম, তার স্ত্রী শাহীন আক্তার জ্যোতি, তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান জুরি আদিবা হাজরী(৩) ও ছোট ভাই রিপন রয়েছেন। হেলালের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার মা খুকি বেগম বিলাপ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এদিকে হেলালের স্ত্রী শাহীন আক্তার জ্যোতি স্বামীর অকাল মৃত্যুর সংবাদ শুনে পাগলপ্রায়। তিন বছরের কন্যা শিশুকে নিয়ে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন তিনি।বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, হেলাল আমাদেরকে কিভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?এখন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে কি খাব আর কিভাবে বাঁচব?
অপরদিকে, গত বছরের এপ্রিল মাসে পরিবারের বড় ছেলে শহীদুল ইসলাম ওরফে শাহেদ জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি একটি দোকানে কর্মরত ছিলেন। সোমবার ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে কর্মস্থল থেকে রওনা হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
সেনবাগ থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী মঙ্গলবার মধ্যরাতে মো.শহীদুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনে।
শহীদুলের বাবা শরীয়ত উল্যা জানান, গত রমজান মাসে তার ছেলে জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরব যায়। ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে তিনি অনেক ঋণের জাঁতাকলে পড়ে যান। শহীদুলের উপার্জন দিয়েই তাদের সংসার কোন মতে চলছিল। তার অকাল মৃত্যুতে তিনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। সংসারে শহীদুলের মা, ছোট ভাই ও বোন রয়েছে।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, শহীদুল অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির হাসি খুশি ছেলে ছিল। তার বাবার আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে সংসারের হাল ধরার জন্য তিনি গত বছর সৌদি আরব গিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন দিশেহারা। ছেলের অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকে স্তব্ধ। ছেলের মৃত্যুতে মা পারভীন আক্তার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন। বার বার বুক চাপরাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। ছেলের লাশ যেন শেষবারের মত দেখতে পান সে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন শহীদুলের মা।
গত রোববার (২৭ মার্চ) সৌদি আরবে স্থানীয় সময় বিকেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওমরাহযাত্রীদের বহনকারী একটি বাস ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় ২২ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিহতদের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি ।
বিষয় : সৌদিদে সড়ক দুর্ঘটনা নিহত বাংলাদেশি
মন্তব্য করুন