২০১২ সালে ৬ বছর বয়সী কাঞ্চনমালাকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান দিনমজুর আলমগীর মণ্ডল। কিন্তু বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হতো তার। তাই কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ করেই সে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায়। 

বাসা থেকে বের হয়ে সড়কের ধারে কাঁদতে থাকে কাঞ্চনমালা। বিষয়টি দেখে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের প্রবাসী দেওয়ান আবু ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। ১১ বছর সেখানে ছিল সে। দীর্ঘ দিন পরে কাঞ্চনমালা আবারও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছেন। এতে খুশি বাবা আলমগীর হোসেন মণ্ডল ও মা। বেসরকারি একটি ব্যাংকের এজেন্ট কর্মকর্তা আসাদুর রহমানের মাধ্যমে বুধবার সন্ধ্যায় বাবা-মায়ের কাছে ফেরে কাঞ্চনমালা। 

ব্যাংক কর্মকর্তা আসাদুর রহমান জানান, তার এক সহকর্মী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় কাজ করেন। কাঞ্চনমালার পালক বাবা-মা ওই সহকর্মীর পরিচিত। তারা মেয়েটির বাড়ি হরিণাকুণ্ড জানায়। পরে তাদের সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। আমি মেয়েটির কাছে গ্রামের নাম জানতে চাইলে হরিণাকুণ্ডের বোয়ালমারি ও বোয়ালখালি ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছিল না। আমাদের এখানে বোয়ালিয়া নামে একটি গ্রাম আছে। আমি ওই গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আলম মণ্ডল নামের এক দিনমজুরের মেয়ে কয়েক বছর আগে ঢাকায় কাজ করতে যায়। পরে সে হারিয়ে যায়। ২৮ মার্চ মেয়েটির বাবা-মাকে মানিকগঞ্জে নেওয়া হয়। মেয়েটি তার বাবা-মাকে চিনতে পারে।

কাঞ্চনমালার পালক মা সুরাইয়া দেওয়ান জানান, তাদের তিন ছেলে। কোনো মেয়ে ছিল না। তাই কাঞ্চনমালাকে মেয়ের আদর-ভালোবাসায় বড় করেছেন। তাকে স্কুলেও ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে পড়ালেখা করেনি। তাকে মা বলেই ডাকতো কাঞ্চনমালা। 

তিনি বলেন, ‘কাঞ্চনমালাকে পাওয়ার পরই আমরা তার বাসা ও পরিবারের খোঁজ করতে থাকি। কিন্তু ও শুধু হরিণাকুণ্ড আর বোয়ালমারি বা বোয়ালখালি ছাড়া কিছু বলতে পারে না। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তার মাধ্যমে ওর ঠিকানা খুঁজে পাই। মেয়েকে ছাড়তে কষ্ট হলেও আপন ঠিকানায় ফিরতে পারায় খুশি।’

কাঞ্চনমালা জানান, ‘কোনোদিন ভাবিনি নিজের বাবা-মা ও বোনদের খুঁজে পাব। আজ আমি নিজের ঠিকানায় ফিরেছি। আর যারা আমাকে লালন পালন করেছেন তারাও খুব ভালো। আমাকে তারা নিজেদের মেয়ে মনে করতেন।’

কাঞ্চনের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার চার মেয়ে। বড় মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কাঞ্চন দ্বিতীয় সন্তান। অভাব অনটনের কারণে তাকে ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ১১ বছর তার কোন খোঁজ পাইনি। অনেক খুঁজেছি। না পেয়ে তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহ আমার মেয়েকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর মানিকগঞ্জের দেওয়ান দম্পত্তির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইল।’