পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাছিকাটা দারগাং এলাকা। বিকেল বেলা নৌকার দু’পাশে বসে নদী থেকে আটল (মাছ মারার ফাঁদ) তুলছিলেন দুই ভাই। চারদিকে সুনসান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ বনের মধ্য থেকে এক লাফে বড় ভাইয়ের ঘাড়ের ওপর হামলে পড়ল বাঘ– বিভীষিকার মতো একটা হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মুহূর্ত পরই সম্বিত ফিরে পেলেন ছোট ভাই। নৌকায় রাখা গরাণের লাঠি নিয়ে ভাইকে বাঁচাতে তিনি প্রাণ বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। চলল বাঘ-মানুষে অসম লড়াই। যে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হলো মানুষের।
‘ভাইয়ের ওপর বাঘ পড়লি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হাতের পাশে থাকা লাঠি নে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’ কথাগুলো বলছিলেন মরণপণ লড়ে একমাত্র ভাই ওয়াজেদ আলীকে (৪৮) সুন্দরবনের বাঘের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনা লিয়াকত হোসেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও তাঁর চোখেমুখে তীব্র আতঙ্ক আর অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট।
লিয়াকত জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় করণীয় ঠিক করতে না পেরে শুরুতে তিনি তীব্র চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু বড় ভাইকে বাঘে নিয়ে যাচ্ছে ভেবে দ্রুতই নৌকার মধ্যে থাকা গরাণের লাঠি নিয়ে তিনি বাঘের শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ঘাড় ও মাথা বাঘের নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও ঘটনার শিকার ওয়াজেদ দু’হাতে বাঘের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। প্রায় দুই থেকে তিন মিনিট এভাবে ধস্তাধস্তির পর এক পর্যায়ে বাঘ ওয়াজেদকে নিয়ে নদীতে পড়ে যায়। এ সময় নৌকায় দাঁড়িয়ে লাঠি দিয়ে বাঘের ওপর সজোরে আঘাত করতে থাকেন লিয়াকত। এক পর্যায়ে বাঘ ওয়াজেদকে ছেড়ে বনের মধ্যে চলে যায়।
ভাইকে বনে রেখে একা ফেরার কথা কল্পনাও করেননি জানিয়ে লিয়াকত বলেন, ‘বাপের মতন বড় ভাইকে বাঘে নেযাচ্ছে দিখে শরীরে যেন অশুরের শক্তি ভর করেল।’ ভাইকে হারানোর ভয়ে ঘটনার সময় নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া ছিল না বলেও জানান তিনি।
চার দিন আগে পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী স্টেশন অফিস থেকে পাস নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যান ওয়াজেদ ও লিয়াকত। তাঁরা শ্যামনগরের ছোটভেটখালী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। বাঘের কবল থেকে উদ্ধারের পর আহত ভাইকে নিয়ে মঙ্গলবার সারারাত এক হাতে নৌকা বেয়ে বুধবার ভোরে লোকালয়ে ফিরতে সক্ষম হন লিয়াকত। ঘাড়, মাথা ও পিঠে বাঘের দাঁতসহ নখের আঘাতে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় ওয়াজেদকে  রমজাননগরের ডা. অমল মণ্ডলের কাছে নেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, বাঘের আক্রমণে এক বনজীবীর আহত হওয়ার খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছেন। তাঁদের বনে প্রবেশের অনুমতি ছিল কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর বন আইনের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বনজীবী হিসেবে আহতের জন্য আর্থিক সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

বিষয় : ওয়াজেদ আলী

মন্তব্য করুন