- সারাদেশ
- শহীদ জিয়া মেডিকেলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০
শহীদ জিয়া মেডিকেলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) গতকাল বুধবার রাতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয় কলেজ হোস্টেলও। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত সোমবার থেকে মেডিকেল কলেজে নতুন বছরের ৩২তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়, যা চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। শুরুর দিন থেকেই নবাগতরা ভর্তি হতে আসতে শুরু করেন। নবাগতদের নিজেদের পক্ষে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন ওই মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আসিফ গ্রুপ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনি গ্রুপের কর্মীরা। এদিকে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দু’নেতার মধ্যে বেশ কিছুদিন থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১১টার দিকে লাঠিসোটা, হকিস্টিক নিয়ে দু'গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রায় ঘণ্টাবাপী চলা এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এ সময় কলেজ ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পরে কলেজ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জনকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
আহতদের মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিমুল হক, শাহরিয়ার অনিক ও ধ্রুব চৌধুরী ছাত্রলীগ সভাপতি এবং রেজা, ফুয়াদ ও অমি সাধারণ সম্পাদক সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া উদয় পাল, রাহাত খান, শাহরিয়ার রুদ্র, মাকসুদুর রহমান, ইমতিয়াজসহ আরও কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে ২৫তম ব্যাচের আফিসকে সভাপতি ও রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছয় সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমবিবিএস ও ইন্টার্ন শেষ করেছেন। নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে। নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের সমর্থক বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।
সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন রনি বলেন, অসুস্থতার জন্য কয়েক দিন ক্যাম্পাসে ছিলাম না। নবাগত শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বিনা উস্কানিতে সভাপতির কর্মীরা আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমার সাত-আট কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হোস্টেলেও হামলা চালিয়ে কক্ষ ভাঙচুর করেছে।
একই অভিযোগ করে ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আসিফ বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা নবাগত শিক্ষার্থীদের তাঁদের পক্ষে ভেড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে বিরোধের জেরে কোনো কারণ ছাড়াই সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছেন আমার কর্মীদের ওপর। এতে আমার বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় নবাগত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, মাত্র ভর্তি হয়েই দেখলাম সংঘর্ষের চিত্র। আমি রাজনীতি করতে চাই না। অথচ আমাকে রাজনৈতিক দলে টানার চেষ্টা করা হয়। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মেডিকেল কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন