বাগানের আমগাছগুলো গুটিতে ভরে আছে। উৎপাদনের জন্য পরিবেশও অনুকূলে। সময়মতো বৃষ্টিতে গুটিগুলো বড় হচ্ছে দ্রুত। যদিও কিছু বাগানে হপার পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে চাষিরা কীটনাশক প্রয়োগসহ গাছের পরিচর্যায় কঠোর পরিশ্রম করছেন। ৪৫-৫০ দিন পর উঠবে মধু ফল আম। সব ঠিক থাকলে এবার কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রথমে গুটি আম পাকবে। এরপর ভালো জাতের গোপালভোগ পাকা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে উঠবে ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনা ও গৌড়মতি আম।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব বাগানে গাছ আমের গুটিতে ভরে আছে। যে কারও মন ভরিয়ে দেবে এ দৃশ্য। বাগান মালিকরা বলছেন, এবার তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন ভালো ফলনের। তবে হাপার পোকার আক্রমণ কিছু বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১৭ থেকে ১৯ মার্চ রাজশাহীতে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি আগাম মুকুল আসা বাগানের জন্য ছিল আশীর্বাদ। বিলম্বে আসা মুকুলের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হয়েছে।

চাষি ও কৃষিবিদরা জানান, মার্চের মাঝামাঝি বৃষ্টির ফলে আগাম মুকুলের আম মোটরদানার মতো গুটি হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় চাষিদের টাকা খরচ করে সেচ দিতে হয়নি। মাটিতে রস জমেছে। এতে গুটি ঝরে পড়ার হার কমেছে। বোঁটা শক্ত হয়েছে। আম দ্রুত বাড়ছে। অনেক রোগব্যাধি ও ধুলোবালি ধুয়ে গেছে। এতে পাতা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাবে। ফলে গাছ বেশি খাবার উৎপাদন করতে পারায় আম দ্রুত বাড়বে।

তবে যেসব গাছের মুকুল বিলম্বে আসে, সেগুলো মার্চের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে মুকুল শুকিয়ে গেছে। তবে চাষি ও কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি ক্ষতির চেয়ে উপকার বেশি করেছে। বিনোদপুর এলাকার বেলাল হোসেন বলেন, সব বাগানে এবার আমের গুটি বেশি এসেছে। এটি শেষ পর্যন্ত থাকলে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ ফলন হবে বলে মত তাঁর।

জাহিদুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, মার্চের বৃষ্টির কারণে আম দ্রুত বাড়ছে, ঝরে পড়া কমেছে। শফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু গাছে হপার পোকার আক্রমণ হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা জানান, এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এতে দুই লাখ ২৬ হাজার টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ছয় হাজার ১৫৬ টন আম হয়েছে। ২০২১ সালে ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে হয় ২ লাখ ১৭ হাজার টন। এ কর্মকর্তা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে। বাগানও বেড়েছে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন হওয়া আম বিদেশে রপ্তানি হবে।

বাড়তি উৎপাদনের আশার মধ্যেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক চাষি।  সিরাজুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। শ্রমিকের পারিশ্রমিক, কীটনাশক ও নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আশা করছি এবার আমের দাম ভালো পাব। মে মাসের মাঝামাঝিতে আম পাকা শুরু হবে।’

রাজশাহীর ফল গবেষণাগার থেকে জানা গেছে, আমের জন্য পরিবেশ ভালো হলেও হপার পোকার আক্রমণ থাকায় কীটনাশক দিতে হবে। যেসব বাগানে মোটরদানার মতো গুটি হওয়ার পরও স্প্রে করেনি, সেগুলোতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এগুলো পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে স্প্রে করতে হবে। নির্দিষ্ট কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে আধা মিলি হারে ও ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে স্প্রে করা যেতে পারে। এতে পোকার আক্রমণ কমবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি গাছেই পর্যাপ্ত গুটি এসেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকদের জন্য দুটি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রথম স্প্রে মুকুল ফোটার আগে। দ্বিতীয়টি গুটি মোটরদানা হওবার পর। এতে ভালো ফলন হবে বলে আশা করেন তিনি।