নদীর নাম কাকন। নদীটি নরসিংদীর বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলত। উত্তাল নদীটি শুকিয়ে বড়চর বিল নামে পরিচয় লাভ করেছে। এর এক পাড়ে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হোসেননগর ও আমতলী গ্রাম। অন্য পাড়ে রায়পুরা উপজেলার বড়চর গ্রাম। দুই পাড়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন এই নদী। শুকিয়ে যাওয়া জায়গায় ধান, পাট, গম, আলু, শিম, বেগুনের মতো সবজি চাষ করেন তাঁরা। কেউ কেউ মাছ শিকার করে সংসার চালান। কিন্তু তাঁদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। কয়েক বছর ধরে নদী থেকে বালু তোলার কারণে দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া হোসেননগর বিলপাড় গ্রামের আতর মিয়ার ছেলে কাকন মিয়ার নেতৃত্বে ৩–৪ বছর ধরে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। তাঁর ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে একই গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে মাসাকিন ও সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে রাকিব মিয়া মিলেও বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলন চক্রের এই তিন সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরও সাহস পাচ্ছে না কেউ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশাসনের দাবি, বালু উত্তোলনের খবর শুনে কয়েকবার এই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন তাঁরা। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে বালুখেকোরা পালিয়ে যায়। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের ধারণা, রাতে বালু উত্তোলন করে থাকতে পারে অভিযুক্তরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাকন নদীতে একাধিক খননযন্ত্র (ড্রেজার) স্থায়ীভাবে স্থাপন করে বালু লুটপাট চলছে। বড় পাইপের মাধ্যমে সেই বালু হোসেননগর গ্রামে স্তূপ করে রাখা হয়। এসব স্তূপ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বালু বিক্রি করা হয়।

হোসেননগর গিয়ে দেখা যায়, কাকন নদীতে বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি। সেখান থেকে বড় পাইপের মাধ্যমে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বালু তুলে রাখা হচ্ছে। উঁচু ফসলি জমি, ঝোপজঙ্গল ও নদীর তীর থেকে বেশকিছু দূরে খননযন্ত্র স্থাপন করায় সহজেই দূর থেকে কারও চোখে পড়ে না। তবে এই বালু ওই সব এলাকায় রাখার কারণে কিছু কিছু স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কাদা মাটিতে এলাকায় ঢোকার রাস্তা হয়েছে পিচ্ছিল। ট্রাক্টর করে বালু বহনের কারণে রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে গেছে।

বালুখেকোদের একজন কাকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘কাকন নদী থেকে আমরা বালু তুলি না। এলাকার কৃষকরা নিজেদের জমি থেকেই বালু তুলে বাড়ির উঠান উচু করেন।’ দুই–তিন বছর ধরেই কি উঠান উঁচু করার জন্য বালু তুলছেন তাঁরা? এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেই কোনো কথা না বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে বালুখেকোদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পান ইউপি সদস্য মিলন মিয়া। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘তারা এখন বালু তোলে কিনা জানি না।’ বালু তোলার কারণে আপনার এলাকার ফসলি জমিতে ও বসতবাড়িতে ভাঙন ধরেছে বলা হচ্ছে। এই অভিযোগ কি সঠিক? জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাঙন ধরেছে কিনা আপনি এসে দেখে যান। আমাকে প্রশ্ন করেন কেন?’

তবে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাউসার কাজল। তিনি বলেন, ‘খবর শুনে আমি কয়েকবার ওই এলাকায় গিয়েছি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হাসানের দাবি, কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের খবর শুনে আগেই পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। রাতে বালু উত্তোলন করা হতে পারে। প্রয়োজনে রাতেই অভিযান চালানো হবে।