নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে এক গৃহবধূকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার ওই নারীকে অর্ধচেতন অবস্থায় উপজেলার পূর্ব সনমান্দি চকের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে উদ্ধার করেন এলাকার কয়েক ব্যক্তি। এ সময় তাঁর হাত-পা বাঁধা ছিল। গায়ের কাপড়চোপড় ছিল ছেঁড়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) জানিয়েছেন, ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন তাঁরা। অসহ্য ব্যথায় বর্তমানে ওই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী বলেন, তিনি সোনারগাঁ পৌরসভার দুলালপুর নোয়াইল গ্রামের লিটন মিয়ার মালিকানাধীন মার্বেল কারখানায় চাকরি করেন। বেতন ও ধার হিসেবে নেওয়া টাকাসহ লিটনের কাছে তিনি মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা পান। এর আগেও শরবতের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করিয়ে লিটন তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এসব বিষয়ে তিনি আদালতে লিটনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য, মামলাসহ নানা বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার লিটনের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় তাঁর। একপর্যায়ে তিনি আর চাকরি করবেন না জানিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা যেতে আদমপুর বাজার থেকে রিকশায় ওঠেন। পথে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সামনে থেকে অপরিচিত এক নারী তাঁর সঙ্গে সেই রিকশায় ওঠেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওই নারী তাঁর মুখের সামনে কিছু একটা ধরলে অচেতন হয়ে পড়েন। পরদিন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বৃষ্টির ঝাপটায় জ্ঞান ফিরলে দেখেন, একটি ভুট্টাক্ষেতের মাঝখানে পড়ে আছেন। সেখান থেকে উঠে দাঁড়াতে চাইলেও পারেননি।

সেখানে তাঁর কান্না শুনে এগিয়ে আসেন পথচারী জুয়েল মিয়া ও সনমান্দি গ্রামের লিপি বেগম। উদ্ধারকারী লিপি বেগম বলেন, হাঁসের জন্য শামুক কুড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ওই নারীর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে সেখান দিয়ে যাওয়া প্রতিবেশী জুয়েলের সহায়তায় উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে আনেন। এ সময় ওই গৃহবধূর জামাকাপড় ছেঁড়া ও এলোমেলো ছিল। এ ছাড়া হাত-পা বাঁধা ছিল বলেও জানান তিনি। পরে ওই নারীকে তাঁর ভাড়া বাড়িতে পৌঁছে দেন।

পরে স্বজনরা ভুক্তভোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে একটি পোশাক কারখানার কর্মী। হাসপাতালে ওই নারীর পাশে ছিল ৯ বছর বয়সী ছোট ছেলে। সে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে মাকে নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই নারী বলেন, আদালত থেকে নোটিশ আসার পর লিটন মিয়া মীমাংসার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। যে কারণে রিকশা থেকে এক নারীর মাধ্যমে অচেতন করে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর মৃত ভেবে ভুট্টাক্ষেতে ফেলে যান।

তাঁর ভাষ্য, যে দড়ি দিয়ে হাত-পা বাঁধা হয়েছিল; একই রকম দড়ি দিয়ে লিটন মিয়া ঢাকা থেকে মালপত্র বেঁধে আনেন। তাঁকে অচেতন করে ধর্ষণে যে লিটন জড়িত, এতেই প্রমাণিত হয়।

ভুক্তভোগী বলেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য লিটন মিয়া তাঁদের গ্রামের মনির হোসেনের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের ক্ষতি করার হুমকি দেন। এতে পরিবারের সবাই ভয়ে আছেন। যে কারণে তাঁর ছোট ছেলে ছাড়া হাসপাতালে কেউ পাশে নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার মতো কোনো স্বজনও নেই।

বৃহস্পতিবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুলালপুর নোয়াইল গ্রামে লিটন মিয়ার মালিকানাধীন কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। তাঁর বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর মেলেনি।

সরেজমিনে পূর্ব সনমান্দি চকের একটি ভুট্টাক্ষেতে দেখা গেছে, সেখানে পড়ে আছে ভুক্তভোগী নারীর ব্যবহৃত স্কার্ফ। পাশেই ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম দেখা যায়।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মো. মোশারফ হোসেন সিজান বলেন, ওই গৃহবধূ অচেতন অবস্থায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন। শরীরের গোপন অংশে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। তিনি দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হবে। কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে।

এর আগেও ওই গৃহবধূ লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ। তাঁর দাবি, মারামারির একটি অভিযোগ পেয়েছেন। দলবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি।

তবে ওই নারীর ভাষ্য, থানা থেকে একজন পুলিশ সদস্য এসেছিলেন হাসপাতালে। তিনি এখনও কোনো অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ সদস্য কী কারণে তাঁর সই নিয়েছেন, তা জানেন না।