আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গড়ে তোলা হচ্ছে ভূমিহীন ও ভাসমান হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য হরিজন পল্লি। প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের মৌজা থানায় হরিজন পল্লি গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিঞা চিলমারী সফরে এলে স্থানীয় প্রশাসন হরিজন সম্প্রদায়ের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবারকে আবাসন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি গৃহের জন্য ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ১০০ শতক জমির ওপর পল্লিটি গড়ে তোলা হবে। পল্লিটিতে ১০ ফুট প্রস্থ রাস্তা থাকবে চারপাশে। পল্লি থেকে একটি সড়ক মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। ১০ শতাংশ জমি শিশুদের খেলাধুলার জন্য এবং শিশু ও বড়দের জন্য পৃথক শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ রাখা হবে।

৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হবে কমিউনিটি সেন্টার এবং ৮ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হবে শ্মশান।

চিলমারী হরিজন সম্প্রদায়ের শ্রীমতী পারুল বালা, হৃদয় লাল বাঁশপোর, নন্দ লাল, জীবন কুমার ও রতন লাল বাঁশপোর জানান, এ রকম একটি পল্লি তৈরি হচ্ছে জেনে তাঁরা খুবই আনন্দিত। তাঁরা আশা করছেন পল্লিতে বসবাসকারী হরিজনরা অন্তত নিজের মতো করে বেঁচে থাকতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায়, যাঁরা মূলত হরিজন নামে পরিচিত, এখনও সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে মিশতে পারেননি। ফলে তাঁরা কলোনিভিত্তিক জীবনযাপন করছেন ব্যাপক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। তাই তাঁদের সমাজের মূলধারায় সংযোজিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা খুব জরুরি। হরিজন পল্লি গড়ে তোলা হলে ৩০টি পরিবারের স্থায়ীভাবে আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের জীবনমানের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে। এ সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের স্বাবলম্বী করা যাবে। আর এসবের মধ্য দিয়েই তাঁদের সমাজের মূল ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুকনুজ্জামান শাহিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী। তিনি চান এ দেশের প্রতিটি মানুষ তার নাগরিক সুবিধা পাক। চিলমারীতে হরিজন পল্লী গড়ে উঠলে উক্ত সম্প্রদায়ের লোকজন প্রথমত নাগরিক ও মানবিক অধিকার পাবে। বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে তাঁরা তাঁদের কমিউনিটিতে এক সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। তাঁদের সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারবেন। তাঁরা নিজ পেশায় যেমন মনোযোগী হতে পারবেন একই সঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে।