রমজান মাসে পাবনার সাঁথিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম। প্রায় প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ তোলা ও প্রক্রিয়াজাত করতে বাবা-মার সঙ্গে মাঠে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হারে ধস নেমেছে।

উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির একই চিত্র। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার একেবারেই কম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রমজান ও ঈদকে ঘিরে এলাকায় কৃষকের পেঁয়াজ তোলার ধুম পড়েছে। তাই বাবা-মার পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থী দিনমজুর হিসেবেও পেঁয়াজ তোলা, পেঁয়াজ কাটার কাজ করছে।

দেশের পেঁয়াজের রাজধানীখ্যাত এই উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার কৃষক কৃষানিরা। পেঁয়াজ তোলা, বাড়িতে নেওয়া, কাটা ও বস্তাজাত করা পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে শিক্ষার্থীরাও। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা থাকলেও উপস্থিতি নেই তেমন।

সৈয়দপুরের প্রান্তিক কৃষক আলহাজ্ব উদ্দিন জানান, কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেশি, তাই ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তানিয়াসহ পরিবারের সবাই এসেছেন পেঁয়াজ তুলতে। তিনি গরিব প্রান্তিক কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। আলহাজ্ব উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের পেছনে টাকা খরচ না করে কিছু টাকা বাঁচলে পরিবারের জন্য ঈদের কিছু কেনাকাটা করতে পারব। এজন্য মেয়েকে স্কুলে যেতে দেইনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকায় প্রান্তিক কৃষকের পেঁয়াজ মাঠ থেকে ঘরে তুলে আনতে সহযোগিতা করছে তাঁদের স্কুলপড়ুয়া সন্তানেরা। অনেক গরিব শিক্ষার্থী ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন ৪-৫ শ’ টাকা করে দিনমজুর হিসেবে পেঁয়াজ তুলে দিচ্ছে কৃষকদের। আবার কৃষকের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা মণপ্রতি ২ থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ বিনিময় নিয়ে পেঁয়াজ কাটার কাজও করছে অনেকে। জানতে চাইলে কয়েকজন শিশু জানায়, ঈদে তাদের বাড়তি টাকার প্রয়োজন। সেজন্য তারা শ্রমিকের কাজ করছে।

সাঁথিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। কোনো কারণে যদি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়, সেক্ষেত্রে নির্দেশ রয়েছে হোমওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার।