- সারাদেশ
- ফুলের শহর
ফুলের শহর

স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের অনেক শহরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী
চৈত্রের আগুনঝরা রোদে ইট-কাঠ-পাথরে গড়া শহরের ক্লান্ত মানুষের মনে সজীবতা ও স্বস্তি এনে দেয় নানা রঙের বাহারি ফুল। এই ফুল নির্মল বাতাসের শহর রাজশাহীর বাতাসে ছড়াচ্ছে সুগন্ধি। মহানগরীর ৩৪ কিলোমিটার সড়ক বিভাজকে ফুটেছে সূর্যমুখী, রক্তকরবী, গোলাপি করবী, হলিহক, মাধবীলতা, বাগানবিলাস, গৌরীচূড়া, মসুন্ধা, কাঠগোলাপ, এলামুন্ডা, রঙ্গন, কসমসসহ হাজারো জাতের ফুল। তবে সূর্যমুখীর হাসিতে এখন গোটা শহরই যেন হাসছে। দৃষ্টিনন্দন এসব ফুল আর মুকুটবাতি, প্রজাপতি বাতিসহ বাহারি সড়কবাতি যেন পুরো শহরকেই করে তুলেছে পর্যটন নগরী। তরুণ-তরুণীরা সুযোগ পেলেই এসব ফুল আর বাতির পাশে দাঁড়িয়ে ফটোফ্রেমে বন্দি করছেন নিজের আনন্দের সময়টুকু।
সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও নির্মল বাতাসের শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহী মহানগরী যেন এবার পরিচিতি পেতে যাচ্ছে ফুলের শহর হিসেবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ উল ইসলাম জানান, সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামানের উদ্যোগে গত চার বছরে শহরে দুই লাখ বিভিন্ন প্রজাতির স্থায়ী গাছ লাগানো হয়েছে। এ সময় ১০ লক্ষাধিক বেড়া জাতীয় ফুলের গাছ লাগানো হয়।
বর্তমানে শহরের কল্পনা সিনেমা হলের মোড় থেকে তালাইমারী মোড়, নগরীর বহরমপুর সিটি বাইপাস, হাইটেক পার্কসংলগ্ন রাস্তায়, বিমান চত্বর ও বিহাস সড়কে ফুটেছে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখী ফুল শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে ফুটতে শুরু করেছে হলুদ গৌরীচূড়া, রক্তকরবী, বকুল, বাগানবিলাস, সিজিয়াম, উইপিং, মাধবীলতা, এলামুন্ডা, বেগুনি নার্গিস, ফাইকাস, রঙ্গনসহ আরও অনেক প্রজাতির ফুল। কোর্ট স্টেশন থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়কে শোভা পাচ্ছে হলিহক, কসমস, মুসুন্ডা, করবী, কলাবতী, টগর, গৌরীচূড়া, সোনালু ও রঙ্গন ফুল।
বহরমপুর সিটি বাইপাসের সড়ক বিভাজকের রেলিংয়ের ফাঁক গলিয়ে উঁকি মেরে হাসছে হলুদ কসমস ফুল। হড়গ্রাম কোর্ট বাজার সড়কজুড়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে উইপিং গাছগুলো যেন ছাতার মতো দাঁড়িয়ে আছে। এ ফুল গাছ জানান দিচ্ছে শহরের মানুষের মনও যেন ফুলের মতোই সুন্দর। ফুল কেউ ছিঁড়ে না। শহরের পথচারী, দোকানদার ও স্থানীয়রা সবাই ফুল ছেঁড়ার বিপক্ষে। কেউ ফুল ছিঁড়লে তারাই প্রতিবাদ করেন। সিটি করপোরেশনের ৭৪ জন কর্মী রয়েছেন এই ফুলের গাছ পরিচর্যার কাজে। প্রতিদিন ট্রাকে করে দেওয়া হয় সেচ।
প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই সড়কগুলোতে ভিড় করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কেউ ছবি তোলেন, কেউ সুগন্ধ নেন, কেউ সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন বন্ধুদের সঙ্গে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘যখন শহরে বের হই, তখন ফুল দেখে মনে সজীবতা পাই। রাজশাহী শহর যে ক্লিন সিটি ও গ্রিন সিটি, তা এসব রাস্তার সৌন্দর্য দেখলেই বোঝা যায়। ফুল ফোটার পর রাস্তার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়েছে।’ আফিয়া আন্নিকা লুবনা বলেন, ‘কংক্রিটের শহরের এমন ফুল দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা প্রতিদিনই ফুলের মাঝে ঘুরে বেড়াই। এই ফুলের ধারাবাহিকতা যেন থাকে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের অনেক শহরের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী। পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে জিরো সয়েল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
২০২০ সালে দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার-২০২০ সম্মাননা’ অর্জন করে রাজশাহী মহানগরী। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২১ পেয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। শহরের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে ফুল মানুষকে সহযোগিতা করে। মনে অনাবিল আনন্দ এনে দেয় ফুল। ইতোমধ্যে বিশ্বে রাজশাহী শহরের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। আশা করছি আগামীতে এই শহরের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে।’
মন্তব্য করুন