- সারাদেশ
- সানজিদার স্বপ্ন পিষ্ট গাড়ির চাকায়
সানজিদার স্বপ্ন পিষ্ট গাড়ির চাকায়

মা-বাবা আর দুই ভাইয়ের চোখের মণি ছিলেন তিনি। ইচ্ছা ছিল বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার, ঘুরে বেড়ানোর। এরই মধ্যে তাঁর বিয়েও ঠিক হয়। রোজার ঈদের পরই কানাডাপ্রবাসী পছন্দের পাত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। সব স্বপ্ন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থীর। শুক্রবার রাতে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেছে তাঁর। দুপুরে কলাবাগানে আত্মীয়ের বাসায় ইফতারের দাওয়াতে গিয়েছিলেন সানজিদা। সন্ধ্যার পর সেখান থেকেই রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন।
অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদার মৃত্যুতে কার্যত শোকে ভাসছেন তাঁর সহপাঠী ও স্বজনরা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে আবেগঘন ভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। মিষ্টভাষী সানজিদার মৃত্যু পরিচিতদের কেউই যেন মেনে নিতে পারছেন না।
জান্নাতুল ফেরদৌস মিম নামের এক তরুণী তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘সানজিদা আপু, তুমি বলেছিলে– মিম তোর আগে আমি কানাডা চলে যাব। তাহলে আমার আগে দুনিয়া ছেড়ে গেলে কেন? এত বেদনাদায়ক মৃত্যু নিয়ে তুমি চলে গেলে! আপু, কানাডায় হয়তো আমাদের দেখা হবে না। হাশরের মাঠে ঠিকই দেখা হবে।’ সানজিদার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
পুলিশ জানায়, সানজিদার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ওয়াসেকপুরে। বাবার নাম আবু তাহের। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে (সৌদি আরব) ছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশে ফেরেন। বর্তমানে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় থাকেন। সানজিদা দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন।
সানজিদার বড় ভাই সায়েম জানান, তাঁর বোন শুক্রবার কলাবাগান এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ইফতারের দাওয়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে রাতে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে কামরাঙ্গীরচরের বাসায় ফিরছিল। রাত পৌনে ১০টার দিকে মোটরসাইকেলটি লালবাগ থানার বেড়িবাঁধে পৌঁছালে কাভার্ডভ্যান ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা সানজিদা ছিটকে পড়েন। এ সময় তার মাথার ওপর দিয়ে কাভার্ডভ্যানের চাকা চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে তিনিসহ (সায়েম) পরিবারের লোকজন হাসপাতালে ছুটে আসেন। মোটরসাইকেল চালক সামান্য আহত হয়েছেন।
সায়েম বলেন, ‘সানজিদা আমাদের দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন। খুব আদরের। কাভার্ডভ্যানের চালকের বেপরোয়া গতির কারণে আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে। বোনকে হারিয়ে ফেললাম আমরা। মা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। বারবার বলছেন, মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দিতে। কেন ইফতারের অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করেননি, সে জন্য নিজেকে দোষারোপ করছেন।’ সানজিদার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, গতকাল শনিবার বিকেলে লাশ নিয়ে তাঁরা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
লালবাগ থানার ওসি এস এম মুর্শেদ সমকালকে বলেন, কাভার্ডভ্যানের চাকায় মেয়েটির মাথা পিষ্ট হয়েছে। ঘটনার পরপরই গাড়িটির চালক শামিম হোসেন পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ চালককে গ্রেপ্তার এবং গাড়িটি জব্দ করে। রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলের চালক মেহেদি হাসানকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। ওসি জানান, কাভার্ডভ্যানের চালকের বিরুদ্ধে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা হয়েছে। আজ (রোববার) তাকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে গত বছরের ১ এপ্রিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইশা মমতাজ মিম কুড়িল ফ্লাইওভারে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান। তিনি মোটরসাইকেল চালিয়ে উত্তরা থেকে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছিলেন।
মন্তব্য করুন