- সারাদেশ
- বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজন
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল
বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজন

নতুনপাড়ার বাসিন্দা সৃজন দেব সজীব সম্প্রতি কলেরায় আক্রান্ত মামিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেটের শামস উদ্দিন হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য রওনা দেন। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালকের সহায়তায় রোগীকে নিয়ে গাড়িতে ওঠেন তাঁরা। হাসপাতাল চত্বর থেকে পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে আসতে দু’বার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসহীন এই গাড়িতে রোগী তুলে যেন বিপদেই পড়েন সজীব। পরে আরেকজন চালকের সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্স পরিবর্তন করে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটে পৌঁছান তাঁরা। গাড়ির ব্যবস্থা করতে গিয়েই এক ঘণ্টা দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছাতে হয়েছে তাঁদের। ভাড়াও গুনতে হয় দ্বিগুণ।
এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সজীব বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে মহাবিপদে পড়েছিলাম। আরও কিছুক্ষণ বিলম্ব হলে পথেই হয়তো মৃত্যু ঘটত রোগীর। অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও দালালরা মানুষের বিপদের সুযোগ নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। গাড়িতে তুলতে পারলেই ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা তারা আদায় করে। অথচ সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটের ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা।
জানা গেল, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রাখা গাড়িগুলো সবই ফিটনেসহীন। অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে অসাধু চক্র বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ভালো গাড়ি সিরিয়ালে রাখা হয় না। ভালো গাড়ি পেতে হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ম্যানেজ করতে হয়। যদি পাওয়াও যায়, সে ক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।
এভাবেই রোগী নিয়ে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় স্বজনকে। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানালেন, দু-চারটা গাড়ি ছাড়া প্রায় সব ক’টি অ্যাম্বুলেন্স যেন বিপদের বাক্স। প্রায় প্রতিদিন এসব গাড়ির শ্রমিক রোগীর স্বজনের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল ক্যাম্পাসে সরেজমিন দেখা যায়, দাঁড়িয়ে থাকা ১৮টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ফিটনেস আছে চারটির। পাশে দাঁড়ানো চালকদের নেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘হকলখানেই (সবখানেই) ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ারি (প্রভাবশালী) মানুষ ছাড়া পায় না। ফিটনেস থাকা পাঁচটা রোগী টাইন্না পারে না, এর লাগি আমরা ফিটনেসহীন গাড়ি চালাই।’
চালক হারুন মিয়া জানান, ‘কয়েক বছরে ১৯ বার জরিমানা দিছি। অখন তো গাড়ির লাগি ট্যাক্স দেই। কাকে ট্যাক্স দাও জানতে চাইলে, পাশের আরেক চালক ধমক দিয়ে তাঁকে (হারুনকে) থামিয়ে দেয়।’
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স (সরকারি) চালক মুহিত মিয়া জানান, হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা হয়েছে। কিন্তু ২৮ বছরেও নতুন কোনো অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়নি।
সুনামগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মহিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ফিটনেসহীন অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, তাদের অনুমতি নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি হাসপাতালে দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। আমাদের একটি আছে। আরেকটির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন