
কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সারাবিশ্ব নানা সংকটে লড়ছে। অনেক দেশ খাদ্য সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে করোনার শুরু থেকে মানুষের পাশে থাকার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার একটি উদাহরণ, দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এই উপহারে ছিল ত্রাণসামগ্রী এবং বাড়িঘর নির্মাণ। অনেক ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে সরকারের এ পদক্ষেপ।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ এবং লোভী সরকারি কর্মচারীর কারণে নয়ছয় হয়েছে বলে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন ৬ এপ্রিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, বগুড়ার এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২২১ বস্তা ত্রাণসামগ্রী উপজেলা চেয়ারম্যানের হেফাজতে রাখেন। যা ছিল ২০২১ সালের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার, তবে বর্তমানে খাবারের অযোগ্য। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ওই সরকারি কর্মকর্তার শেষ কর্মদিবস ছিল ৬ এপ্রিল। তার আগে তিনি ওই বস্তাগুলো হস্তান্তর করে যান।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন ত্রাণসামগ্রী মানুষের মধ্যে যথাসময়ে বিলি করা হলো না? অতীতেও যে এমন ঘটনা ঘটেনি, তা কে বলবে? কেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা হলো, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া জরুরি।
এই ত্রাণসামগ্রীতে ছিল ১৫ কেজি চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিড়া, নুডলস, চিনি, হলুদ, মরিচ, ধনে, গুঁড়া মসলা, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত। উপজেলা চেয়ারম্যানের মতে, ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি বরাদ্দপত্র ছিল। এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, ত্রাণসামগ্রী তিন মাস আগে বরাদ্দ পেয়েছি; সেগুলোর কিছু বিতরণ করা হয়েছে।
দু’জনের কথার মধ্যে মিল নেই। কারণ, ত্রাণসামগ্রী ২০২২ সালের জুলাই মাসে পেলেও এখন প্রায় ৯ মাস গত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওই অফিসে শেষ কর্মদিবসে ত্রাণসামগ্রীর তথ্য বের হলো। অর্থাৎ কোনো একটা ঝামেলা আছে। এভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত দরিদ্র মানুষের হক নষ্ট করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। অন্যথায় এসব অপকর্ম আরও বৃদ্ধি পাবে। যাঁদের বেতন জনগণের করের টাকায় হয়; জনগণের সঙ্গে এমন খামখেয়ালি আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ত্রাণ নিয়ে নয়ছয় বরদাশত করা যাবে না।
যেখানে আজ বিশ্ব সংকটে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা উচিত আমাদের, সেখানে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে অসহায়দের প্রাপ্য হক নিয়ে কেউ কেউ নয়ছয় করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন– ‘মানুষের দুর্ভোগের সময় ত্রাণ নিয়ে কেউ নয়ছয় করবেন না। তাহলে কিন্তু রক্ষা পাবেন না। নয়ছয় করলে আপনাকে ধরা পড়তেই হবে। টাকা-পয়সা কিন্তু লুকানো যায় না। দুঃসময়ে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তাকে কিন্তু আমি ছাড়ব না।’ এসব বলার পরও কীভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে দুঃসাহস পান?
এমন কাণ্ডে জড়িতদের তদন্ত করে তাৎক্ষণিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু কেন বারবার এই ঘটনা ঘটে? অতীতে ত্রাণ বা সরকারি টাকা অনেকেই দুর্নীতি করে আত্মসাৎ করেছেন। কারণ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এসব অ-সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সম্পূর্ণভাবে বের না হতে পারলে দুর্নীতি, ত্রাণ নিয়ে নয়ছয় এবং সরকারি সম্পদ নষ্ট করার মতো ঘটনা আরও ঘটবে বলে মনে হয়। তাই এসব অপকর্মে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোক, তদন্ত করে তাৎক্ষণিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে– এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন