পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। শহরের বেশিরভাগ এলাকার নলকূপে হাজার চাপেও উঠছে না পানি। অকেজো পড়ে আছে সেগুলো। পৌরসভার সাপ্লাই পানির সরবরাহও নিরবচ্ছিন্ন নয়। আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা তীব্র পানির সংকটে পড়েছেন। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।

বুধবার ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পুকুরে গোসল সেরে বাড়ির বালতি, কলস ভরে পানি সংগ্রহ করছিলেন বেশ কয়েকজন। খাবার ও রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে ছুটতে হচ্ছে যেখানে ডিপ টিউবওয়েল কিংবা সাবমার্সিবল পাম্প আছে। শহরের উমিরপুর, ফতেমোহাম্মদপুর, মাজড়িয়া, স্কুলপাড়া, সাঁড়াগোপালপুর, বিলপাড়া, পাতিবিল, শৈলপাড়া, লোকোকলোনি, নূর মহল্লাসহ প্রায় সব এলাকাতে একই অবস্থা।

ফতেমোহাম্মদপুর, নিউ কলোনি, তিনতলা এলাকার ৫ হাজার বাসিন্দা স্থানীয় মসজিদের সাবমার্সিবল পাম্প থেকে দিনে দুইবার লাইন ধরে পানি সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, তিন-চার দিন ধরে বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। সেহরির সময় ও দুপুরে মসজিদ থেকে লাইন ধরে পানি সংগ্রহ করছেন। একই কথা জানালেন তিন তলা কলোনির সালেহা বেগম।

বায়তুল হাদি জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব জানান, আশপাশের কোনো বাড়ির নলকূপেই পানি উঠছে না। রোজার দিন এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘবে মসজিদ থেকে দুই বেলা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য ১১টি পানির পাম্প রয়েছে। ৭টি পাম্পের মাধ্যমে পৌরবাসীকে পাইপলাইনে পানি সরবরাহ করা হয়। কয়েকদিন আগে উপজেলা রোড ও পশ্চিম অংশের দুটি পাম্প বিকল হয়ে যায়। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। তবে পানির চাপ কম থাকার কারণে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক নেই।

পৌরসভার পানি শাখার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর বিশ্বাস বলেন, চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈশ্বরদীতে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জানান, পৌরবাসীর পানির কষ্ট লাঘবে পানি সরবরাহের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে পানির জন্য আর কষ্ট করতে হবে না।

পানির জন্য হাহাকার চলছে নাটোরের লালপুরেও। বুধবার দুপুরে চংধুপইল ও আড়বাব ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। অকেজো পড়ে আছে। তাই কলস, বালতি ও জগ নিয়ে সাবমারসিবল পাম্পে ভিড় করেছে এলাকার মানুষ।

কথা হয় চংধুপইল ইউনিয়নের দিয়াড়পাড়া গ্রামের ডালিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়ির কলে ২০ বার চেপেও এক গ্লাস পানি ওঠে না। পানির অভাবে কোনো কাজও করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে ১০ মিনিট হেঁটে পানি নিতে এসেছি।’

চলতি মাসে ১০টি ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে ৩২ ফুট নিচে নেমেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। চরাঞ্চল বিলমাড়িয়া, ঈশ্বরদী, লালপুর, দুড়দুড়িয়া, চংধুপইল, আড়বাব ও ওয়ালিয়া এলাকায় ভুগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। ১০টি ইউনিয়নে ৫৪ হাজার হস্তচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেশিরভাগ এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি ওঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক।

ওয়ালিয়া গ্রামের কৃষক সনি আলী বলেন, ‘রাত ৩টার সময় মাঠে গিয়ে ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করেও এক বিঘা জমিতে পানি দিতে পারি নাই। বাড়ির কলের মতো মাঠের পাইপেও ঠিকমতো পানি উঠছে না। পানির অভাবে চাষবাদ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী রবিন আহমেদ বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবমারসিবল পাম্প ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে বৃষ্টি না হলে পানির সংকট তীব্র হবে।’