- সারাদেশ
- রাবির মঙ্গল শোভাযাত্রার আকর্ষণ পঙ্খিরাজ ঘোড়া, টেপা পুতুল
রাবির মঙ্গল শোভাযাত্রার আকর্ষণ পঙ্খিরাজ ঘোড়া, টেপা পুতুল
-samakal-6436e0ca34424.jpeg)
রাবির চারুকলায় ব্যস্ত সময় কাটছে শিক্ষার্থীদের - সমকাল
প্রবল তাপদাহে তপ্ত রাজশাহীর পথঘাট। তীব্র গরমে মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের হতে সাহস দেখাচ্ছেন না। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বৈশাখকে বরণ করে নিতে সেখানে গরমেও হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন একদল শিক্ষার্থী। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নববর্ষকে বরণে লোকসংস্কৃতির নানা উপকরণ তৈরি করছেন তারা। যদিও রমজান মাস এবং ঈদ ঘনিয়ে আসায় এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় লোকসমাগম কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার রাবির চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রার জন্য এরইমধ্যে যেসব লোকজসংস্কৃতির উপকরণ তৈরি করেছেন, সেগুলোতে এখন চলছে রঙের কাজ। রোদে শুকাতে দেওয়া কাগজ ও বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি পঙ্খিরাজ ঘোড়া, মস্তবড় কাগজের তৈরি কচ্ছপ। আশপাশে রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের টেপা পুতুল, রয়েছে বিশাল আকৃতির দুটি মুখোশ। এছাড়া বৈশাখ বরণে তৈরি করা হয়েছে বিশালাকার নকশিপাখা, কাপড়ের পুতুল ও উড়ন্ত পায়রা।
শিক্ষার্থীরা জানান, এবার রাবির মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ বিশাল পঙ্খিরাজ ঘোড়া ও টেপা পুতুল। পঙ্খিরাজ ঘোড়া বাংলা লোকগাথা বা পৌরাণিক গল্পগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আগামীর দিনগুলো যাতে সুন্দর, আনন্দময় ও আরও গতিশীল হয় সেই প্রত্যাশা থেকেই পঙ্খিরাজ ঘোড়া শোভাযাত্রায় রাখা হয়েছে। আর বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে প্রাচীন খেলনা টেপা পুতুলকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
নববর্ষের প্রস্তুতি সম্পর্কে রাবি চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন সংকট নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এটি প্রথম শোভাযাত্রা। এবার বেশি আড়ম্বর হবার কথা ছিল। কিন্তু রমজান ও ঈদের কারণে শিক্ষার্থীদের সমাগম কম হবে বলে আশঙ্কা করছি। কেননা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাড়ি চলে গেছে। আমাদের কাজ করার মতো শিক্ষার্থীও কম পেয়েছি। তারপরও যতটুকু সম্ভব ততটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকবে না।’
কাপড়ের পুতুল এবং নকশিপাখা তৈরি করছিলেন মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওমী কামাল নেহা। তিনি বলেন, ‘নকশীপাখা বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাড়িতে দাদি-নানিদের দেখেছি এগুলো তৈরি করতে। গ্রামীণ এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই বৃহৎ পরিসরে দুটি পাখা তৈরি করা হয়েছে। আবার ছোটবেলায় কাপড়ের পুতুল দিয়ে অনেকে খেলেছি। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা এখনও কাপড় দিয়ে পুতুল বানিয়ে খেলে। নববর্ষে কাপড়ের পুতুলকে বড় রূপ দিতে চেষ্টা করছি।
কাগজের মুখোশ তৈরি করছিলেন মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল মুবিন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি বড় মুখোশ তৈরি করেছি। একটি রাক্ষসের, অপরটি হাসিমুখ। বাঙালি লোককাহিনিতে অনেক অপশক্তি আছে। সেই অপশক্তিগুলোকে দূর করতে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রতীকী হিসেবে মুখোশগুলো কাজ করবে।’
সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতিবারই দেশের ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো বর্ষবরণে তুলে ধরার চেষ্টা করে চারুকলা অনুষদ। এবারও নিজস্ব অর্থায়নে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবকিছু আয়োজন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, তারা কিছু আর্থিক সহায়তা করবে। তবে এখন পর্যন্ত আমরাই আয়োজনের ব্যয় বহন করছি।’
মন্তব্য করুন