আগে বৈশাখ ঘিরে মাটির খেলনা থেকে শুরু করে বাসনপত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন মৃৎশিল্পীরা। প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে ফিকে হয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য। টিকতে না পেরে অনেকে পেশা বদল করেছেন। তবে কষ্ট করেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কিন্তু এখন বৈশাখী মেলার মতো উৎসব পালা-পার্বণেও মৃৎশিল্পীদের তেমন ব্যস্ততা দেখা যায় না। কারণ, মাটির জিনিসপত্রের চাহিদায় ভাটা।

 নালিতাবাড়ী পৌর শহরের খালভাঙ্গা পালপাড়ায় প্রায় ৫০-৬০টি পরিবার বাস করে। তাদের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তাদেরই একজন সুশিলা রানী পাল (৫০)। বাপ-দাদার হাতে মাটির তৈজসপত্র বানানো শিখেছেন। এখন স্বামীর সংসারে এসেও দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ দিব্বি করে যাচ্ছেন। সংসারে স্বামী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা সবাই বিবাহিত। ছেলেরা কিছু কারিগরি কাজ শিখে পেশা বদলে ফেলেছে।

সুশিলা রানী বলেন, বছরে একবার পহেলা বৈশাখ, পূজা-পার্বণের আগে একটু বেচাকেনা হতো। কিন্তু এখন তাও হয় না। এক সময় এই ব্যবসার কদর ছিল। বাড়িতে এসে পাইকাররা বায়না দিয়ে যেত। এখন সেই দিন নেই। এখন কেউ মাটির থালায় খায় না কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা। কেউ রাঁধে না মাটির হাঁড়িতে। প্লাস্টিক এবং অ্যালুমিনিয়ামের ছড়াছড়িতে মাটির জিনিসের কদর কমে গেছে।

মৃৎশিল্পীরা জানান, বাসনকোসনের চেয়ে খেলনাসামগ্রীর চাহিদা অনেক বেশি। বিভিন্ন মেলা, ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে এসব পণ্য বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। পালপাড়ার বাসিন্দা প্রতিমা রানী পাল বলেন, ‘আমাদের এখন দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। এই পহেলা বৈশাখেই আমাদের বেচা সবচেয়ে বেশি হয়।’ তাঁর দাবি, বর্তমানে মাটির জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। তবে পহেলা বৈশাখে একটু কদর বাড়ে। এখন অল্প বাসনকোসনসহ মাটি দিয়ে শিশুদের জন্য নানা রকমের খেলনা– পুতুল, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, পাখি, হরিণ, ফুল, ফুলের টব, ফলমূল তৈরি করেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল জানান, পালদের ব্যাপারে খোঁজ নেবেন তিনি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।