আধুনিক সব তৈজসপত্রের ভিড়ে দিন দিন হারাতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। তবে এই সংকটের মাঝেও হবিগঞ্জ জেলার অন্তত ৪ শতাধিক পরিবার এখনও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। রাত পোহালেই সারাদেশ মাতবে বাংলা নববর্ষের বাহারি উদযাপনে। এই উৎসবকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা।

জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবই গ্রামের পালপাড়া। এই গ্রামে ২৫টি পরিবার এখনও বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। বংশ পরম্পরায় প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ মিলে তৈরি করছেন মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালা, ঢাকনা, বাটি, মগ, কাপ-প্লেটসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানান পণ্য। বছরজুড়ে কমবেশি এসব পণ্য তৈরি হলেও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাড়ে ব্যস্ততা। এই সময়ে চাহিদা বাড়ায় তৈজসপত্রের সঙ্গে তৈরি হয় মাটির ব্যাংক, পুতুল, গরু-মহিষসহ নানা ধরনের খেলনা। সেগুলো বিক্রি হয় স্থানীয় বিভিন্ন বৈশাখী মেলায়। করোনার কারণে গত কয়েক বছর তেমন বেচাকেনা না হলেও এবার জমজমাট কেনাবেচার প্রত্যাশা তাদের।

মৃৎশিল্পীরা বলছেন, প্লাস্টিক, সিরামিক্স, মেলামাইন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের ভিড়ে চাহিদা কমেছে মাটির তৈরু এসব পণ্যের। সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচ বাড়ায় আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। আগের সুদিন না থাকায় এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই।

মৃৎশিল্পী অমিয় চন্দ্র পাল জানান, একটা সময় মৃৎশিল্পীদের কদর ছিল। সময়ের পরিবর্তনে সেই কদর কমতে শুরু করে এখন। শিল্পী সুমিত্রা পাল জানান, হাঁড়ি-পাতিল, থালা, ঢাকনা, বাটি, মগসহ মাটির তৈরু জিনিসপত্র বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। বৈশাখী মেলার জন্য এই সময়টায় তাঁদের ব্যস্ততা বাড়ে। কারণ, এই মেলায় ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেতেই মানুষের মাঝে মাটির জিনিসের চাহিদা সৃষ্টি হয়।

তবে এই ব্যস্ততার মাঝেও নিজের দৈন্যদশা তুলে ধরেছেন মৃৎশিল্পী রুমা রানী পাল। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মাটির জিনিসত্র তৈরি হচ্ছে। সেখানে তৈরি হওয়া পণ্যগুলোর ডিজাইনে আধুনিকতা ও নতুনত্ব থাকায় চাহিদাও ব্যাপক। কিন্তু হবিগঞ্জের মৃৎশিল্পীদের কাছে এখনও সেই প্রযুক্তি পৌঁছায়নি।

বিসিক হবিগঞ্জের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহামুদুল হাসান জানান, হবিগঞ্জ জেলায় মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা তৈরি হওয়ার পর প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।