স্বজনদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন রাজধানীর মানুষ। দু-এক দিনের মধ্যে দেশের মহাসড়কগুলোতে শুরু হবে বাড়তি যানবাহনের চাপ। প্রতি বছর ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় যানজট। এবারও ব্যতিক্রম নয়। মুন্সীগঞ্জের ওপর দিয়ে যাওয়া দেশের দুটি প্রধান মহাসড়কেও যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর কারণ হিসেবে তাঁরা পদ্মা সেতু, ধলেশ্বরী-১ ও ২ সেতু, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুতে সাবেকি (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে টোল আদায়কে দায়ী করছেন।

গত ঈদুল আজহায় পদ্মা সেতুতে টোল আদায় করা হয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এতে বঙ্গবন্ধু (ঢাকা-মাওয়া) এক্সপ্রেসওয়েতে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাগামী লাখো মানুষ। একই এক্সপ্রেসওয়েতে পড়েছে ধলেশ্বরী-১ ও ২ সেতু। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার কুচিয়ামোড়ার কাছে সেতুগুলোর টোল প্লাজা। এখানেও একইভাবে টোল আদায়ের কারণে যানজটে পড়েন লোকজন। এবার ঈদের বাকি আর তিন-চার দিন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সময়ের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে বাড়বে যানবাহনের চাপ। দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা বলছেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করায় এবারও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনের জটলা বাঁধবে।

মাদারীপুর পরিবহনের সুপারভাইজার বিপুল ঘোষ বলেন, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় বুথের সংখ্যা কম। পাশাপাশি দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। ঈদের আগে বুথ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করা প্রয়োজন। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি কমে আসবে।

শরীয়তপুর পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. আব্বাস আলী বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আদায়ের কারণে টোল পরিশোধে দেরি হয়। ঈদের সময় প্রতি সেকেন্ডে একাধিক গাড়ি টোল প্লাজায় আসবে। এ কারণে যানবাহনের জটলা বাঁধবে। আর এ থেকে যানজট এক্সপ্রেসওয়েতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

গত ঈদে যানজটে দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে এবার আগেভাগেই বাড়ি ফিরছিলেন লিমা আক্তার। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে তাঁর বাড়ি। ঢাকার ডেমরায় থাকেন। স্বামী বেসরকারি কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বাসে করে গ্রামে ফিরছিলেন লিমা। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে রোববার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। লিমা আক্তার বলেন, ‘গত বছর ঈদে বাড়ি ফিরতে গিয়ে যানজটে পড়েছি। এতে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এবার তাই আগেভাগেই চলে যাচ্ছি।’

যানজট এড়াতে প্রস্তুতির কথা জানালেন পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে কর্মরত সেতু বিভাগের প্রকৌশলী রাজন আহমেদ। তিনি বলেন, টোল প্লাজায় চারটি বুথের মাধ্যমে এখন স্বাভাবিকভাবে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। তেমন চাপও নেই। তবে ঈদ সামনে রেখে চাপ বাড়তে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় দুটি বুথ বাড়বে। সব মিলিয়ে এখানে ছয়টি বুথে টোল আদায় করা হবে।

সিরাজদীখানের কুচিয়ামোড়ায় ধলেশ্বরী-১ ও ২ সেতুর টোল আদায়ে দক্ষিণবঙ্গমুখী লেনে ছয়টি বুথ রয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাশেম মো. নাহিন রেজা। তিনি বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে দুটি লেনে ইটিসি পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায়ের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।’

তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এবার জেলার লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা দুর্ভোগ থাকবে না। থাকবে না দীর্ঘ অপেক্ষার পালা। এখান থেকে মাঝিকান্দি রুটে আজ মঙ্গলবার থেকে ফেরি চলবে শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য। তবে দুর্ভোগের শঙ্কা রয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। মেঘনা সেতুর টোল প্লাজা ঘিরে জেলার গজারিয়া উপজেলাজুড়েই যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের সময় যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে উপজেলার জামালদী থেকে বাউশিয়া পাখির মোড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে।

মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজায় ধীরগতির কারণেই এ যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানান ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ এ এস এম রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবার ওই সড়কের ১৩টি পয়েন্টে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হবে।