দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটটি দীর্ঘ সময় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে ছিল দুর্ভোগের আরেক নাম। বিশেষ করে প্রতি ঈদে দৌলতদিয়া ঘাটে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির দৃশ্য সাধারণ বিষয়। তবে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের সেই ভোগান্তি আর থাকছে না বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রতি বছর যেখানে ফেরি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এবার সেখানে উল্টো ঘাটে ফেরিই অপেক্ষায় থাকবে গাড়ির।

গত রোববার গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দৌলতদিয়া ঘাটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী পারাপারসহ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ সমন্বয় সভা।

সভা সূত্রে জানা যায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ফেরিগুলোর খুঁটিনাটি সমস্যা মেরামতের কাজ পুরোদমে চলছে। পারাপারে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ লক্ষ্যে নৌরুটের ফেরিবহরে ২০টি ফেরি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রী পারাপারের জন্য ফেরির পাশাপাশি ২২টি লঞ্চও চলাচল করবে।

ইউএনও জাকির হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে ভাড়া মনিটর করবে প্রশাসন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন।  

গতকাল সোমবার সকালে ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে অপেক্ষারত কোনো গাড়ির সারি। আগের মতো হাঁকডাকও নেই পরিবহন শ্রমিক ও হকারদের। দৌলতদিয়া ঘাটের শতাধিক হোটেলের চেয়ার-টেবিলে পড়েছে ধুলার স্তর। ঘাটকেন্দ্রিক অধিকাংশ হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে আরও আগেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কমেছে যানবাহনের সংখ্যা।

বিআইডব্লিউটিসির তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার গাড়ি পার হয় এই ঘাট দিয়ে। পদ্মা সেতু চালুর আগে যার সংখ্যা ছিল প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার।

তবে এত কিছুর মাঝে ভিন্ন রকমের ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন দৌলতদিয়া ৭নং ফেরিঘাটে যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানে থাকা প্রাইভেট কার চালক শাহিনুর রহমান। তিনি জানান, দৃশ্যপট বদলে গেলেও দৌলতদিয়া ঘাটে অনেক ভোগান্তি রয়েই গেছে। আগে ফেরির নাগাল পাওয়া ছিল সোনার হরিণের মতো। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। প্রায় এক ঘণ্টা তীব্র রোদের মধ্যে ফেরিতে উঠে বসে আছেন। পর্যাপ্ত যানবাহন লোড না হওয়ায় ফেরি ছাড়ছে না।

পূর্বাশা পরিবহনের সুপারভাইজার আরিফুর রহমান জানান, এখন ঘাটগুলোতে গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি বসে থাকে। অনেক সময় পর্যাপ্ত গাড়ি না পেয়ে অর্ধেক গাড়ি নিয়েই ফেরি ছেড়ে যায়। এ জন্যই এ রুটে এবার ঈদে দুর্ভোগ হবে না। তবে ঈদে এই রুটে মোটরসাইকেলের চাপ বাড়তে পারে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো ও কর্মস্থলগামী মানুষকে নির্বিঘ্নে পারাপার করতে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ঈদের আগে ও পরে নৌরুটের ফেরিবহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ ফেরি চলবে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ঈদের আগে ও পরে কোনো প্রকার দুর্ভোগ হবে না ঘাটে।