- সারাদেশ
- তদন্ত চলাকালেই বিদেশ যাওয়ার অনুমতি অভিযুক্ত শিক্ষককে
তদন্ত চলাকালেই বিদেশ যাওয়ার অনুমতি অভিযুক্ত শিক্ষককে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও এক শিক্ষক চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন অবস্থায়ই ওই শিক্ষককে তড়িঘড়ি করে বিদেশে যাওয়ার অনাপত্তিপত্র দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হওয়ায় তিনি এ সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত সাদিয়া জাহান ফার্মাসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২ : ফার্মাসিউটিক্যালস অর্গানিক কেমিস্ট্রি-২’ শিরোনামের কোর্স শিক্ষক ছিলেন তিনি।
গত বছরের নভেম্বরে ওই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছিলেন ওই কোর্সের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার পর সাদিয়া জাহানকে উত্তরপত্রগুলো বুঝিয়ে দেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। তবে ওই পরীক্ষার ফল তৈরি করতে গিয়ে নম্বর না পেয়ে সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরপত্র খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে। এর পর তাঁর মাধ্যমেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি অবহিত করেন সাদিয়া। অবশ্য এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির বাকি দুই সদস্য কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে সাদিয়া বলেন, ‘সেগুলো আমার কক্ষেই ছিল। মূল্যায়ন করতে গিয়ে খুঁজে না পেয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি এবং তাঁর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর বিষয়টি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে জানালে তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। গত মাসের শেষের দিকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি।
তদন্ত চলাকালেই বিদেশ যাওয়ার জন্য সাদিয়া গত বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কার্যদিবসে অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন। তবে একই ধরনের অনাপত্তিপত্র পেতে অন্যান্য শিক্ষকের দেড় থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষার নজির রয়েছে। শিক্ষকরা দাবি করছেন, উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হওয়ায় অভিযোগ তদন্তাধীন থাকার পরও বিনা ভোগান্তিতে তিনি অনাপত্তিপত্র পেয়ে গেছেন। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের দিয়ে। এতে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাকে অবহিত করার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে বুধবার রাতে উপাচার্য আবদুল মঈন সমকালকে বলেন, ‘সাদিয়া জাহানের বহির্গমনের জন্য অনাপত্তিপত্র লাভের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তাছাড়া ওই শিক্ষক অনাপত্তিপত্র নিলেও শিক্ষক সংকটের কারণে এখন আর কাউকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা ছুটিও বর্তমানে বন্ধ আছে। তিনি আরও বলেন, কমিটির সুপারিশ অনুসারে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উত্তরপত্র হারিয়ে ফেললে শিক্ষার্থীদের কীভাবে নম্বর দেওয়া হয়– এ প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে শিক্ষার্থীদের ফল চূড়ান্ত করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এর আগে ২০২০ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একটি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলেন শিক্ষক আতিকুর রহমান। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় সিন্ডিকেট। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁকে সতর্ক করেই অভিযোগ থেকে রেহাই দেন বর্তমান উপাচার্য আবদুল মঈন।
মন্তব্য করুন