মানসিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার পারভেজের জীবন চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ছোট ভাইয়ের সংসারে থাকেন। নিজের শখ, আহ্লাদ নিজেই বুঝতে পারেন না। তারপরও ঈদের দিন নতুন পোশাক পরা, ভালো-মন্দ খাবারের আগ্রহ তো আছেই। হয়তো ছোট ভাই এই শখটা পূরণ করে দিতেন। কিন্তু তার আর দরকার হলো না। ঈদের আগের দিনই সমাজসেবার ভাতা পেয়ে গেছেন পারভেজ।

আনোয়ারের ছোট ভাই মামুন বলছিলেন, ‘ভাইয়া মানসিক প্রতিবন্ধী বলে কারো বোঝা নয়। সরকার তার দায়িত্ব নিয়েছে। ভাইয়া নিজের টাকাতেই ঈদের নতুন পোশাক পরেছে। এই টাকাটা ঈদের আগে ঠিকমতো পাঠানোর জন্য আমরা নগদকে ধন্যবাদ জানাই।’

এমন প্রায় অর্ধ কোটি পরিবারের মুখে এই ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তর। সারা বছর কয়েক কোটি মানুষকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পৌঁছে দেয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। তারা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার ৭৫ শতাংশ বিতরণ করে থাকে। 

সারা দেশে এখন কয়েক কোটি মানুষ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা পাচ্ছেন নগদ-এর মাধ্যমে। চার বছরের যাত্রায় নগদ এখানে এক বিপ্লব করে ফেলেছে। যা বদলে দিয়েছে তাদের সরকারি ভাতার অভিজ্ঞতা। এখন তারা ভাতা পাওয়াটাকে আশীর্বাদ মনে করতে পারছেন।

এ প্রসঙ্গে নগদ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা স্বচ্ছভাবে বিতরণ করে আসছি। বিভিন্ন পর্যায়ের উপকারভোগীর কাছে ভাতার টাকা স্বচ্ছভাবে সঠিক সময়ে পৌঁছে দিয়েছে নগদ। আমরা চাই দেশের মানুষ নগদ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্যটা বুঝে নিক।’

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তিসহ সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা নগদ সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার প্রদান এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক সহায়তাসহ সব প্রকার অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে নগদ।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণ শুরু করেন। পরে গত বছর মার্চে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় চুক্তি আবারও নবায়ন করে। চুক্তি অনুসারে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার থেকে ব্যক্তি (জি-টু-পি) পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত মোট ভাতা গ্রহীতার ৭৫ শতাংশকে নগদ-এর মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করা হয়।

 সমাজসেবা অধিদপ্তর বিতরণ করে থাকে বিধবা-স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু ভাতা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি। এই ভাতাগুলো যারা পেয়ে থাকেন, তারা স্বভাবতই সমাজের প্রান্তিক মানুষ। এদেরই একটা বড় অংশ তাদের ভাতা পেলেন ঈদের আগের চার দিনে। এই মানুষগুলোর ঈদ রঙিন হয়ে গেছে এই ভাতার টাকা হাতে পেয়ে।

জানা গেছে, ঈদের আগের চার দিনে প্রায় ৮৬১ কোটি টাকা বিতরণ করেছে নগদ। এই ভাতা পৌঁছে গেছে প্রায় কোটি মানুষের হাতে। এই মানুষগুলোর পরিবারে ঈদের আনন্দ এনে দিয়েছে এই ভাতার টাকা।

এমনই ঈদের আগে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছেন মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পারভেজ। তার ঈদটা রঙিন হয়ে গেছে এই ভাতার টাকায়। মানিকগঞ্জের ঘিওরের বাক প্রতিবন্ধী মনোয়ার হোসেনও ভাতার টাকা পেয়েছেন ঈদের আগে।

মুখে তেমন কথা বলতে পারেন না। তারপরও এই টাকাটা যে তাঁর কত বড় আনন্দ এনে দিয়েছে, তা বোঝাতে পারলেন এই কথার মধ্য দিয়ে, ‘আমি টাকা পাইছি। পোলার জন্য জামা কিনছি। নগদ ভালো। সমাজসেবা ভালো। ঈদ ভালো হইছে।’