ফরিদপুরের বেশ কয়েকটি বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল প্রাকৃতিক ঘাসের বিশাল চারণভূমি। এ সুবিধায় জেলায় গবাদি পশু লালন-পালন সহজ। বিশেষ করে দুধ উৎপাদন হয় প্রতিদিন প্রায় ৩২ হাজার লিটার। বাজারজাত করার সুবিধা না থাকায় ক্ষুদ্র কৃষক এবং খামারিরা দুধের ন্যায্য মূল্য পান না। এ বাস্তবতায় ঘি, বাটার, পনির, চকলেট, ক্যান্ডি, রসমালাই, দই, আইসক্রিমসহ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন ও দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কারখানা স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন বা মিল্ক ভিটা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন সংশোধন আনা হচ্ছে। আর ফরিদপুরের পরিবর্তে মাদারীপুরে কারখানার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকের হাটে কারখানা স্থানান্তর করতে চায় প্রকল্পের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মূল কারখানার স্থান পরিবর্তন এবং নতুন একটি ছোট ডেইরি প্লান্ট স্থাপনসহ কিছু সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের অনুমোদনের জন্য সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে বাড়তি সময় এবং অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরে কারখানা স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জমি পাওয়া যাচ্ছে না। যে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই বণ্টন করা হয়। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু জায়গার প্রস্তাব করা হয়। তবে পরিমাণে তা যথেষ্ট না হওয়ায় রাজি হয়নি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা মিল্ক ভিটা। শেষ পর্যন্ত মাদারীপুরের টেকের হাটে মিল্ক ভিটার নিজস্ব জমিতে কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জি এম মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, মাদারীপুরে মিল্ক ভিটার নিজস্ব জমি রয়েছে। সেখানে কারখানা হলে বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। এতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া ফরিদপুরে ফসলের জমিতে কারখানা স্থাপন ঠিক হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিজমি নষ্ট না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে প্রকল্পের অন্যান্য অঙ্গ ফরিদপুরেই থাকছে। মাদারীপুরে কারখানা হলে কোনো সমস্যা হবে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দ্রুতই মিল্ক ভিটার বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছানো সহজ হবে।

প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদের ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩৪৪ কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশের মতো। এখন ব্যয় বাড়িয়ে ৩৮৭ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, করোনার কারণে দুই বছর কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে পশু কেনা এবং লালন-পালনের ব্যয় হিসেবে ক্ষুদ্র কৃষক এবং খামারিদের মধ্যে ঋণ বিতরণ এবং দুধ সংগ্রহ পয়েন্ট নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনী প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পর পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো দুধ উৎপাদনে সমৃদ্ধ হবে। এতে গ্রামীণ দরিদ্রদের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন করা যেতে পারে। প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদনের জন্য একনেকে উত্থাপনের দরকার হবে না। বাড়তি ব্যয় ৫০ কোটি টাকার কম থাকায় এটি পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দিতে পারেন।