ধুনটের ভূমি অফিসে কাঙ্ক্ষিত টাকা না পেলেই হয়রানির ফাঁদে ফেলা হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। জমির জন্য জিম্মি করা হচ্ছে তাঁদের। প্রতিবাদ করেও প্রতিকার মিলছে না। সম্প্রতি বদলি হওয়া ভূমি কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অফিস ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে– দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এমন অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন, গোপালনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার, পৌর কাউন্সিলর সেলিম রেজাসহ কয়েকজন।

সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে ভূমিসেবা সহজীকরণসহ বেশ কয়েকটি সেবা অনলাইনে চালু করা হয়। এর মধ্যে কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১ হাজার টাকা, মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকাসহ মোট ১ হাজার ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে গত বছরের ২২ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয় সারাদেশে অনলাইনে জমির নামজারি শুরু করে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ অমান্য করে জমির নামজারি করতে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হচ্ছে ভূমি অফিসে।

সমকালের অনুসন্ধানে সম্প্রতি বদলি হওয়া ইউএনও (ধুনট ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত দায়িত্ব) সঞ্জয় কুমার মহন্ত এবং অফিস সহকারী শামীমের বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। সঞ্জয় কুমার মহন্ত গত বছরের ১৬ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালনকালে এক মাসে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১ হাজার ৪০০ নামজারি কেস পাস করেছেন। অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে গত ৭ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বদলি করা হলেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। এই এক মাসে ৯৮টি নামজারি কেস পাস করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, একটি মহল মিথ্যা অভিযোগ করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।

চিকাশী গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, পাঁচ শতাংশ জমির নামজারির প্রস্তাব উপজেলা ভূমি অফিসে পাঠানোর পর প্রথমে সার্ভেয়ার সেলিম হোসেনকে ৫০০ টাকা দেন। এরপর অফিস সহকারী শামীম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জয় কুমার মহন্তকে দিতে হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ টাকা। ৬ এপ্রিল তাঁকে খতিয়ান পর্চা দেওয়া হয়। ওই পর্চায় জমির দলিল রেজিস্ট্রির ভুল তারিখ লেখা হওয়ায় তা কোনো কাজে আসছে না। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অফিস সহকারী শামীম হোসেন ও সার্ভেয়ার সেলিম হোসেন।

তারাকান্দি গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, ৯৪ শতক জমির নামজারি করতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এরপরও ছয় মাস ঘুরে কাগজ হাতে পান। এক শতক জমি কমিয়ে ৯৩ শতকের পর্চা দেওয়া হলে ফের ভুল সংশোধনের আবেদন করে আরও তিন মাস ঘুরতে হয়েছে।

স্কুল শিক্ষক উত্তম কুমার তলাপাত্র জানান, তিন শতক বাড়ির জমির নামজারি করতে ঘুষ দিতে হয়েছে সাত হাজার টাকা। পর্চায় তাঁকে পৌনে চার শতক জমি দেওয়া হয়েছে। হিসাবের গরমিলের কারণে তিনি জমি বিক্রি করতে পারছেন না।

নারায়ণপুর গ্রামের ছারোয়ার হোসেনের স্ত্রী মমতা খাতুন জানান, ছয় শতক জমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়েতে খরচ করেছেন। নামজারিতে তাঁকে ঘুষ দিতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা। গত বছরের ১৯ মার্চ ভূমি অফিস থেকে পর্চা দেওয়া হয়েছে। পর্চায় গ্রামের নাম নারায়ণপুরের পরিবর্তে পীরহাটি লেখায় জমিটি রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে পারেননি ক্রেতাকে।