গ্রামের পথ ধরে আপন মনে রিকশা চালাচ্ছেন ৪৪ বছর বয়সী মাইকেল ঢালী। তিন চাকার রিকশা যতই ছুটছে ততই তার কপালে বাড়ছে চিন্তার ভাজ। কারণ সারদিনের খাবার জোগাড় করে বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। কেবল স্ত্রী সন্তানদের নিয়েই চিন্তা নয়, তার চিন্তা আশেপাশের কয়েক গ্রাম ও গ্রামের মানুষদের নিয়েও। কারণ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পরও বাদ দেননি রিকশা চালানো। এটাই তার একমাত্র পেশা।

স্থানীয়দের অনেকে তাকে ভালোবেসে ‘নিউ মাইকেল’বলে ডাকেন। তাদের ভাষ্য, রিকশা চালান আবার মানুষের সুখ-দুঃখের কথাও শুনেন এই মেম্বার। এমন জনপ্রতিনিধি তারা কখনো পাননি।

একদিকে সংসারের চাপ অন্যদিকে সুখ-দুঃখের খবর জানতে রিকশা চালিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়িও যান। তাই তো স্থানীয়রা মাইকেলকে আবারও দেখতে চান একইভাবে, একই পদে।  

শরীয়তপুরের পোরাগাছা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। গত বছরের জানুয়ারিতে ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হন মাইকেল।  আবদুর রব ঢালী ও নীলুফা বেগম দম্পতির ছেলে তিনি। ছেলেবেলায় বাবা-মাকে হারানোর পরে আট ভাই-বোনের  সংসারের হাল ধরেন। নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই মানুষকে নানা সহযোগিতা করেছেন। সে কারণেই স্থানীয়দের কাছে মাইকেলের জনপ্রিয়তা আকাশ সমান। 

সামনের দিনগুলোতেও সবার হয়ে থাকবেন মাইকেল ঢালী এমন প্রত্যাশার কথা জানান এলাকাবাসী। পোরাগাছা গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী আলমগীরের স্ত্রী ফুলমালা সমকালকে জানান, আমরা অনেক গরিব মানুষ। কোনো জায়গাতেই সহায়তা পাচ্ছিলাম না। মাইকেল ভাই যখন মেম্বার হইলো এরপর আমরা মাসে মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। আমাদের জন্য বেশি কিছু করুক সেইটাও চাইনা। যা দিছে এইটাই তো কেউ দেয় না। 

মাইকেলের স্ত্রী লিপি বেগম সমকালকে বলেন, আমার স্বামীর পড়াশুনা জানা নেই। আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। ও আগে থেকেই মানুষের যেভাবে পারে সাহায্য করতো। তাই মানুষ ভালোবেসে আমার স্বামীকে নির্বাচনে দাড় করাইছিলো। আমার স্বামী যে মানুষদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মর্যাদা যেন রাখতে পারেন। আমি সেই দোয়াই করি। গরিবের সেবা করেই যেতে পারে যেন সব সময়।

মাইকেল ঢালী সমকালকে বলেন, ‘আমার কোন কৃষিজমি নেই। বাবার থেকে দুই শতাংশ জমি পাইছিলাম। সেখানের ঘরে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকি। তেমন বড় কোনো আয়ের মাধ্যম নেই। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৬০০ টাকার মতো আসে। এই আয়ে সংসার চালাই। মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টাও করি। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এমন সততার সঙ্গে চলতে পারি।’ 

মোক্তারেরচর ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা শেখ বলেন, ‘মাইকেলের কার্যক্রমে আমরা অনেক সন্তুষ্ট। একবারের জন্যও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। দেখেছি রিকশা নিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজও নেন তিনি। কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো একদম সঠিকভাবে বিতরণ করছেন মাইকেল। আমরা তার জন্য শুভকামনা জানাই।’