ফরিদপুরে অস্ত্রোপচারের সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার একদিন পর প্রসূতি নারীও মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে শুক্রবার মারা যান নবজাতকের মা সুমি আক্তার (৩০)।

মারা যাওয়া সুমি আক্তার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গেরাখালা দিঘীরপাড় এলাকার মো. বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী।

সুমির পরিবার জানায়, গত ২ মে গৃহবধূ সুমি আক্তারের প্রসববেদনা উঠলে তার স্বজনরা ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অস্ত্রোপচারের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর বলা হয় সুমির পেটে একটি টিউমার আছে। পাশাপাশি এটাও বলা হয় গর্ভের শিশুটি যে অবস্থায় আছে তাতে তাকে জীবিত অবস্থায় বের করা সম্ভব নয়, তবে প্রসূতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে। এরপর অস্ত্রোপচার করার পর গৃহবধূর অবস্থা সংকটপূর্ণ হলে বাচ্চা কয়েক টুকরো করে কেটে বের করে মাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে কয়েক ব্যাগ রক্তও দেওয়া হয়। কিন্তু, শুক্রবার বিকাল ৫ টায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাতেই দাফন করা হয়।

ওই গৃহবধূর পরিবার জানায়, সুমি আক্তারের ৯ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। তার স্বামী টাঙ্গাইলে একটি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের চাকরি করেন।

সুমি আক্তারের স্বামী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, তার স্ত্রীর আগে-পরে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু কোনো পরীক্ষার রিপোর্টে শিশুটির অবস্থাগত সমস্যার কথা বলা হয়নি। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর পর বলা হয় শিশুটি গর্ভে বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। বাচ্চাকে বাঁচালে মাকে বাঁচানো যাবে না বলে জানানো হয়। পরে মাকে বাঁচানোর কথা বলা হলেও বাচ্চা ও মা দু'জনেই হারিয়ে গেল।

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক বলেন, ঘটনাটি নিয়ে শনিবার সকাল থেকে চিকিৎসকদের নিয়ে আমি সভা করেছি। জানতে চেষ্টা করছি আমাদের চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা ছিল কি-না। এ বিষয়ে প্রত্যেক চিকিৎসককে আগামীতে আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হক আরও বলেন, এটি ছিল একটি ‘ডিক্স্ট্রাকটিভ’ অস্ত্রোপচার। সাধারণত মাকে রক্ষা করার জন্য এ জাতীয় অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য শিশুটির পাশাপাশি মাকেও আমরা বাঁচাতে পারিনি।

তিনি বলেন, শিশুর মাথা বেশি বড় হয়ে গেলে এবং জরায়ুর মুখে আটকে গেলে স্বাভাবিকভাবে শিশুকে বের করা যায় না আবার ঠেলে পিছনের দিকে বের করা যায় না, এই পর্যায়ে এ জাতীয় অস্ত্রোপচার আমাদের করতে হয়। এই বাচ্চাটির মাথা ও শরীর আলাদা করে মায়ের পেট থেকে বের করা হয়।

মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে পরিচালক এনামুল হক বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, জরায়ুর পর্দা না পড়া এবং সর্বোপরি অস্ত্রোপচারজনিত জটিলতার কারণে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতাল থেকে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় জটিল অবস্থানের কারণে শিশুটি মারা গেছে। এছাড়া মা'কে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে একদিন পর প্রসূতি মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর পুলিশকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, যদি এ ব্যাপারে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাই তবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।