এই কিছুদিন আগেও এখানে জনমানুষের বসতি ছিল। স্বপ্ন ছিল। ছিল প্রাণের স্পন্দন। আজ আর কিছুই নেই। এমনকি স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেছে হতাশায়। এ হচ্ছে নদীভাঙনের শিকার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী উজান গঙ্গাপুর গ্রামের বাসিন্দাদের কথা।

এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪০ বছরে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০টিরও বেশি গ্রাম নদীতে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহীন হয়েছে শতাধিক পরিবার। অসময়ের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে প্রতিষ্ঠিত পরিবারের অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে ছিন্নমূলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শতাধিক পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই সে সম্বলটুকুও মিশে গেছে নদীতে। নদীভাঙন এলাকায় কবরস্থান, ক্লাব, বসতবাড়ি, ঈদগাহ, মসজিদ, স্কুল, রাস্তাঘাট ছাড়াও শতাধিক একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে নদীতে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মানিকগঞ্জ ও অমরগঞ্জ বাজারের একাংশও ভেঙে গেছে নদীতে।

কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী উজান গঙ্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ ধরে আবারও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ওই গ্রামে ১৫টি পরিবার নদীভাঙনের মুখে। অধিকাংশ ঘরে ফাটল ধরেছে। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়বে নদীতে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উজান গঙ্গাপুর গ্রামের সহায় সম্বলহীন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী রুবি বেগম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে আতঙ্কে আছেন তাঁরা। যে কোনো সময় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়বে নদীতে। একই গ্রামের দিনমজুর রুবেল আহমদ জানান, তাঁর পরিবারের সবই চলে গেছে কুশিয়ারায়। আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। এবার তাঁদের ভাগ্যে কী আছে বলা মুশকিল।

উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবজাল হোসেন বলেন, নদীভাঙনের খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শনের সময় নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জোরালোভাবে জানিয়েছি। আশা করি, তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ প্রতিবেদককে জানান, নদীভাঙন এলাকাটি কুশিয়ারা নদীর একটি বাঁক। ব্লক বা বস্তা দিয়ে এ ভাঙন ঠেকানো যাবে না। গতকাল আমাদের প্রধান প্রকৌশলী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে সমীক্ষার পর নকশা তৈরি করে কাজ শুরু করা হবে।