- সারাদেশ
- চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট: ঘরে ঘরে চুলা বন্ধ, যানবাহনে বাড়তি ভাড়া
চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট: ঘরে ঘরে চুলা বন্ধ, যানবাহনে বাড়তি ভাড়া

গ্যাসের কারণে চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচল। প্রায় ফাঁকা সড়কের ছবিটি নগরীর আগ্রাবাদ থেকে আজ দুপুরে তোলা
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে শনিবার বিকেলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আজ রোববারও চুলা জ্বলছে না ঘরে। বাড়তি টাকা দিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনতে হচ্ছে। একই কারণ দেখিয়ে গণপরিবহনেও ভাড়া বেশি আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
বহদ্দারহাট সংলগ্ন নগরীর বাদুরতলা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ জেসমিন আকতার সমকালকে বলেন, চুলায় গ্যাস না থাকায় হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হচ্ছে। সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করা খাবারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাঁদের হোটেলের খাবার খেতে হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে যখন গ্যাস বন্ধ হয় তখন কর্মস্থলে ছিলেন মো. মুহিব। নগরীর দেওয়ানহাট সংলগ্ন মৌসুমী আবাসিক সোসাইটির এই বাসিন্দা সমকালকে বলেন, ‘ঘরে রান্না না হওয়ায় রাতে আমাদের শুকনো খাবার খেতে হয়েছে। মনে করেছিলাম আজ (রোববার) গ্যাস পাওয়া যাবে। কিন্তু না পাওয়ায় শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে।’
নগরীর বিভিন্ন এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দুর্ভোগের একই চিত্র পাওয়া যায়। তবে অনেকে ইলেকট্রিক ও লাকড়ির চুলায় রান্না করছেন।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশ কোম্পানি লিমিডেটের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ১৯ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামজুড়ে গ্যাস-সংকট থাকবে। বর্তমানে মজুত থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণত ৮০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত থাকে তাঁদের।
চট্টগ্রামে কেজিডিসিএলের সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৭০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
সিএনজি স্টেশন বন্ধ : গ্যাস সংকটে বন্ধ রয়েছে নগরীর সিএনজি স্টেশনগুলোও। সিএনজিচালিত বেশিরভাগ যানবাহনের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ রয়েছে। যেসব যানবাহন চলাচল করছে গ্যাস না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সেগুলোতে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সিএনজিচালিত মিনিবাসে উঠানামায় সাধারণত ভাড়া ৫ টাকা। সিএনজি সংকটের অজুহাতে রোববার দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত সিএনজিচালিত মিনিবাসের ভাড়া হচ্ছে ৯ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু আজ দুপুরে উঠানামা ভাড়া আদায় ২০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে গাড়ির চালক-সহকারীদের বাদানুবাদ চলছে। আগ্রাবাদ মোড়ে কথা হয় আবদুর রহমান নামের একজন যাত্রীর সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘সিএনজি পাওয়া না যাওয়ার অজুহাতে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আমরা যাত্রীরা অসহায়।’ এভাবে অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন আরও কয়েক যাত্রী।
গ্যাসের গন্ধে আতঙ্ক: এদিকে গ্যাস সরবরাহ না থাকলেও শনিবার নগরীর অনেক এলাকায় রান্নাঘরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আজ রোববারও অনেক এলাকা থেকে এমন গন্ধ পাওয়া যায়। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এতে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, গ্যাসের লিকেজ হয়েছে কিনা তা জানতে ‘অডোরেন্ট’ নামে এক ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার করেন তাঁরা। এ রাসায়নিক থেকেই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ গন্ধ বেশি পাওয়া যায়। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
মন্তব্য করুন