- সারাদেশ
- জোর করে তরুণের বিয়ে দিলেন মেম্বার, পর দিনই তালাক
জোর করে তরুণের বিয়ে দিলেন মেম্বার, পর দিনই তালাক
ছয় লাখ টাকা নিয়ে ‘মীমাংসা’

প্রতীকী ছবি।
চক্ষু চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এক তরুণ। পার্শ্ববর্তী নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের এক নারী মায়ের চোখে সমস্যার কারণে গত শুক্রবার রাতে চিকিৎসক না পেয়ে ওই তরুণকে বাড়িতে ডাকেন। তিনি সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হাজির হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন মিয়া। অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে ওই তরুণের কাছে তিনি টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় জোর করে রাতেই তাঁদের বিয়ে পড়িয়ে দেন। মীমাংসার কথা বলে পর দিন সকালে তরুণের পরিবারের কাছ থেকে পৌনে ৬ লাখ টাকা আদায় করেন মিলন। এরপর তালাক নিবন্ধন করানো হয়।
এ ঘটনার পর থেকে ওই তরুণ কারও সামনে আসছেন না। এলাকায় চশমার দোকান আছে ওই তরুণের। সপ্তাহে এক দিন এক চক্ষু চিকিৎসক তাঁর দোকানে রোগী দেখেন। যে নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয় তিনি মায়ের সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। স্বামী তাঁকে ছেড়ে গেছেন। তাঁর এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
আজ রোববার ওই তরুণের বড় ভাই বলেন, তাঁর ভাই হাফেজ এবং স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। নান্দাইলের ওই নারী তাঁর ভাইয়ের দোকানে মাঝেমধ্যে ভিক্ষা করতে যেতেন। তাঁর মায়ের চোখের সমস্যা ছিল। এ কারণে খবর পাঠিয়ে শুক্রবার রাতে তাঁকে বাড়িতে ডাকেন। সেখানে যাওয়ার পর ইউপি সদস্য মিলন মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল তাঁর ভাইকে আটক করে। এরপর তাঁদের বাড়িতে ফোন করে টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে রাজি না হলে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) ডেকে ১০ লাখ টাকার কাবিনে তাঁদের বিয়ে পড়িয়ে দেন। তাঁরাই আবার রাত ৩টার দিকে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দিয়ে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন। মানসম্মান বাঁচাতে পৌনে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ভাইকে মুক্ত করেন। ঘটনার রাতে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আসেনি।
আজ ওই নারীর বাড়ি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। সাংবাদিক যেতে দেখে সাত-আট তরুণ ছুটে আসেন। তাঁদের একজন সবুজ মিয়া বলেন, ‘ওই তরুণ এই নারীর বাড়িতে এসে ধরা পড়েছে। তাই গ্রামবাসী তাঁদের বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে।’ কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন মিলন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ওই তরুণ অসামাজিক কাজ করতে এসেছিল। তাই বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি।’ অন্যায় করলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো না কেন– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট, বিচার যা করার আমরাই করব।’
সে রাতে বিয়ে পড়াতে যান মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার আজিজুল ইসলাম। তিনি রাতে বিয়ে পড়িয়ে সকালে তালাক নিবন্ধন করেছেন বলে স্বীকার করেন। এ বিষয়ে মোয়াজ্জেমপুর ইউপির চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার লিপি বলেন, মানুষকে ফাঁদে ফেলে এভাবে টাকা আদায় করা অপরাধ।
ঘটনার পর দিন ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে বদলি হয়েছেন নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ। আজ তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে তার আগেই মিলন মেম্বার ফোন করে বলেন, পুলিশ পাঠানোর দরকার নেই। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন