- সারাদেশ
- ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দ্রুত বাড়ছে
ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দ্রুত বাড়ছে

ব্যাংক ব্যবস্থায় দ্রুত বাড়ছে সরকারের ঋণ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ব্যাংক থেকে সরকার নিট ৮২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এক মাস আগে গত মার্চ পর্যন্ত যা ছিল ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ছিল ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সরকারের চলতি ব্যয় বাড়লেও আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, বিদেশি ঋণের ছাড় কম থাকা এবং সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমে যাওয়ায় ব্যাংকঋণে নির্ভরতা এভাবে বেড়েছে। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ কমিয়ে সঞ্চয়পত্রে বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ পাচ্ছে, গ্রাহকরা আগে কেনা সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করছেন তার চেয়ে বেশি। নগদায়নের একটি অংশ মেয়াদপূর্তির কারণে। আরেকটি অংশ হলো, মেয়াদপূর্তির আগেই নগদায়ন। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারের নিট ঋণ ৪ হাজার ১৬২ কোটি টাকা কমেছে। যদিও বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।চলতি অর্থবছরের গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বিদেশি ঋণের ছাড় হয়েছে ৫৩৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ৬৮০ কোটি ডলার ছিল।
মতামত জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় যে উপায়ে সরকারের ঋণ বাড়ছে, তা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সরকারের ঋণের বেশিরভাগই দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া টাকা ছাপানোর মতো। তিনি বলেন, সরকারের আশানুরূপ রাজস্ব আয় না হওয়ার একটি বড় কারণ হলো, আমদানি কমছে। মূলত বৈদেশিক মুদ্রাস্বল্পতার কারণে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার প্রভাবে আমদানি কমছে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়বে।অন্যদিকে সুদহার নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদ বাড়বে। তখন আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এত ঋণ নিতে হবে না।
চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দিয়েছে ৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। গত এপ্রিলে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চলমান চাপ বিবেচনায় ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে সঞ্চয়পত্রসহ ব্যাংকবহির্ভূত খাতে বাড়ানো দরকার।
মন্তব্য করুন