
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে জগন্নাথপুর ইউনিয়নে রয়েছে জোতপাড়া ‘কোল’ (জলাধার)। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেখানকার কয়েক হাজার বিঘা জমির মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা মাঠেই ধান কেটে মাড়াই করেন। এ ভোগান্তি কমাতে তাঁরা কোলে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছেন।
তবে এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জেলেরা। তাঁরা বলছেন, প্রায় ১০০ একর জমিতে পদ্মার কোলে প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে। প্রশাসনকে প্রতিবছর রাজস্ব দিয়ে তাঁরা ভোগদখল করেন। সেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হলে অভয়াশ্রমে বিঘ্ন ঘটবে। বাঁধের কাজ বন্ধের দাবিতে তাঁরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোল ঘেঁষে শত শত কৃষকের কয়েক হাজার বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে ধান, পাট, সরিষা, সবজিসহ নানান ফসলের চাষাবাদ করেন তাঁরা। কোল দিয়ে চলাচল করেন জগন্নাথপুর, চর জগন্নাথপুর, হোগলা, চর মহেন্দ্রপুর ও পাবনা জেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ। জগন্নাথপুর মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যাতায়াত করে।
বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে কাদামাটিতে হেঁটে চলাচল করেন সবাই। চলাচলের সুবিধার্থে জগন্নাথপুর-চর জগন্নাথপুর বরাবর মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা, কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা। যদিও পানি সম্পদের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ এবং নদী কমিশন আইনে জলাশয় ভরাট কিংবা বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য শাস্তি ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
গত রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মা নদীর কোল। সেখানে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষি জমিতে নানান ফসলের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা পাকা ধান কেটে জমিতেই মাড়াই করছেন। কৃষিজমি ও কোলের মাঝ বরাবর কয়েকশ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে বস্তাভরা ধান ও খড় মাথায় করে বাড়িতে নিচ্ছেন কৃষক। স্থানীয়দেরও চলাচল করতে দেখা গেছে।
হোগলা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, তাঁর তিন বিঘা জমিতে তিনি ধান চাষ করেছেন। রাস্তা না থাকায় জমিতে ধান মাড়াই করে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। জগন্নাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চর জগন্নাথপুর পর্যন্ত পাকা বাঁধ ও সড়ক হলে সবাই উপকৃত হবেন। মিজানুর রহমান হান্নান বলেন, ফসল ঘরে তোলার মতো রাস্তা নেই, গাড়ি যেতে পারে না। রাস্তা না থাকায় সবারই কষ্ট হয় বলে জানান পাবনার কৃষক লিটন হোসেন।
তবে কোল এলাকার জেলে সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল বারীর দাবি, দেড় শতাধিক জেলে প্রতি বছর নির্ধারিত টাকা দিয়ে কোল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন। কিন্তু সাবেক ইউপি সদস্য কালাম হোসেন স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে বাধা সৃষ্টি করছেন জলাশয়ে।
অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কালাম হোসেন বলেন, চাঁদা তুলে সবাই মিলে রাস্তা নির্মাণ করছেন। জেলেদের মাছ চাষে বাধা হবে না। কোলে তিন কিলোমিটার বাঁধ, পাকা সড়ক ও ছোট সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকী বাদশা বলেন, জলমহাল স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা ইজারা পেয়েছেন। এর ওপারে একটি ওয়ার্ডের মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা করা হচ্ছে। এতে জলমহালের সমস্যা হবে না।
ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, জেলেদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ আছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন