গানের ভক্ত দীপংকর মণ্ডল। ইউটিউব বা ফোনে গান শোনেন না তিনি। এলপি রেকর্ড বা ক্যাসেট প্লেয়ারে গান না শুনলে তাঁর মনে হয় না, গানের প্রকৃত স্বাদ পাচ্ছেন। তাই বাড়িতে গড়ে তুলেছেন গান শোনার যন্ত্রের সংগ্রহশালা। সেটিকে গানের রাজ্য বললেও ভুল হবে না।

মাগুরা শহরের তাঁতীপাড়ায় দীপংকর মণ্ডলের বাসভবন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এলপি রেকর্ডার, ক্যাসেট প্লেয়ার ও রেডিও। গান শোনার সব যন্ত্রই আছে সেখানে। ৬০, ৭০ কিংবা ৮০’র দশকের এসব যন্ত্রের সবগুলোই কার্যক্ষম। এসব যন্ত্রে গান শুনে তাঁর মনে হয়, যেন সে সময়ে আছেন।

শুধু রেকর্ডার নয়, তার সংগ্রহে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য প্রায় শতাধিক এলপি রেকর্ডও। এখনও শতাধিক ক্যাসেটের অ্যালবাম সক্রিয়। রেডিওটি ৬০’র দশকের হলেও নিয়মিত গান শোনেন তিনি।

বিএডিসির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা দীপংকরের বাড়ি মাগুরায় হলেও বর্তমানে তিনি পাবনায় কর্মরত রয়েছেন। মাগুরা থেকেই নিয়মিত অফিস করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর গান শোনার শখ। সে জন্য তখন থেকেই সংগ্রহ করতেন পুরোনো দিনের ক্যাসেট রেকর্ডার। বাবার পুরোনো রেডিওটিও তাঁর খুব প্রিয়।

দীপংকর বলেন, ২০০৩ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কুষ্টিয়ার একটি মেকানিকের দোকান থেকে তিনি কিনেছিলেন পুরোনো এলপি রেকর্ডার। সেখানেই পান কিছু এলপি রেকর্ড। তখন ছিল ক্যাসেটের যুগ। এলপি রেকর্ড পাওয়া খুব কঠিন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন সূত্রে তিনি সংগ্রহ করেন শতাধিক রেকর্ড। এর মধ্যে ৬০’র দশকেরসহ দুষ্প্রাপ্য অনেক রেকর্ডও রয়েছে।

দীপংকর জানান, এখন রেডিও, ক্যাসেট, এলপি প্লেয়ার কেউ শোনে না। এ জন্য এগুলো মার্কেটে পাওয়া যায় না। সবাই এখন মোবাইল ফোন, ইউটিউবে গান শোনে। কিন্তু তিনি রেডিও, ক্যাসেট বা এলপি রেকর্ডার ছাড়া গান শুনে মজা পান না।

বাংলাদেশে এলপি প্লেয়ারের চলন না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি আনিয়েছেন তিনি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে জাপান, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের তৈরি রেডিও। জাপানের আকাই কোম্পানির তৈরি একটি ক্যাসেট প্লেয়ারে তিনি নিয়মিত গান শোনেন। সত্তরের দশকের ক্যাসেট প্লেয়ার হলেও দীপংকরের নিয়মিত যত্নে এটিতে এখনও আগের মতোই গান শোনা যায়।

দীপংকর বলেন, ‘আমি ছোট চাকরি করি। আমার সাধ থাকলেও সাধ্য খুব কম। এটুকু সাধ মেটাতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে আমার খুব ইচ্ছে গান নিয়ে বড় একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলব।’

মাগুরার রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি খান মাজহারুল হক লিপু বলেন, ডিজিটাল যুগে এসে দীপংকর মণ্ডলের এসব যন্ত্র সংগ্রহ ও নিয়মিত গান শোনার ঘটনা ব্যতিক্রমী বিষয়। তাঁর সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করা ও নতুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।