নিয়ম না মেনে ১০ কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করেছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। এই কর্মকর্তাদের বেতন দিতে গিয়ে চার বছরে কোম্পানির খরচা হয়েছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, এই আত্তীকরণ নিয়ে দায়ের করা মামলা পরিচালনায় আইনজীবী নিয়োগেও হয়েছে অনিয়ম। এই খাতে খরচ হয়েছে আরও প্রায় ৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কোম্পানির গচ্চা গেছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অডিট অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক নিরীক্ষায় এসব অনিয়ম ধরা পড়ে। এপ্রিল ও মে মাসে পাঠানো আলাদা চিঠিতে অনিয়মের বিষয়টি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে জানিয়েছে অডিট অধিদপ্তর। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

অডিট অধিদপ্তরের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেট্রোবাংলার বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সুন্দরবন গ্যাসে প্রেষণে কর্মরত ১০ কর্মকর্তাকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে আত্তীকরণের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হয়। আত্তীকরণের পর কয়েকজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে। অডিট অধিদপ্তর জানিয়েছে, আত্তীকরণ কোনো সাধারণ নিয়োগ নয়; বরং বিশেষ নিয়োগ। পেট্রোবাংলার সার্ভিস রুলে আত্তীকরণের কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে উদ্ধৃত কর্মচারী আত্তীকরণের কোনো বিধান নেই। তবে আত্তীকরণ বিষয়ে বিদ্যমান দ্য সারপ্লাস সার্ভন্টেস অ্যাবজর্পশন অর্ডিনেন্স ১৯৮৫, উদ্ধৃত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন, ২০১৬ এবং সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ অনুসারে আত্তীকরণ করতে হলে কর্মকর্তা-কর্মচারী উদ্ধৃত ঘোষণা করতে হবে। সুন্দরবন গ্যাসের এই ১০ কর্মকর্তা উদ্ধৃত কর্মকর্তা নন, তাঁরা প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কাউকে আত্তীকরণ করা যাবে না। এসব আইন বা বিধিবিধান না মেনে সুন্দরবন গ্যাস ১০ কর্মকর্তাকে আত্তীকরণ করে। আত্তীকরণের বিধিবিধানের তথ্য গোপন করে বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহকারী ব্যবস্থাপক ও সহকারী কর্মকর্তা পদে সরাসরি পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করা হলেও উপব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপক পদে আত্তীকরণ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, আত্তীকরণের জন্য পারস্পরিক যোগসাজশে কৃত্রিম জনবল সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।

অডিট অধিদপ্তর বলছে, বিধিবহির্ভূতভাবে আত্তীকরণ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা গুরুতর অনিয়ম। এই ১০ কর্মকর্তার বেতন-ভাতা, সার্বক্ষণিক গাড়ি সুবিধা এবং গৃহঋণ দেওয়ায় ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চার বছরে কোম্পানির ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আত্তীকরণের বিরুদ্ধে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটি মামলা হয়। অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্তীকরণ বিধি মেনে না হওয়ায় কোম্পানির এসব মামলা পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা ছিল না। আত্তীকরণপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে মামলা চালানো হয়। এ জন্য কোনো প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়াই উচ্চ ফিতে সরাসরি পদ্ধতিতে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। আইনজীবীর বিল পরিশোধ-সংক্রান্ত নোটে কোম্পানির কোনো প্যানেল আইনজীবী না থাকায় পেট্রোবাংলার আইন উপদেষ্টা/প্যানেল আইনজীবী নিয়োজিত করার কথা বলা হয়েছে। যদিও নিয়োগ করা আইনজীবী পেট্রোবাংলার প্যানেল আইনজীবী নন। ফি নির্ধারণেও পেট্রোবাংলার রেট অব শিডিউল মানা হয়নি। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাওয়া এই আইনজীবীর পেছনে সুন্দরবন গ্যাসের গুনতে হয়েছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা; যা গুরুতর অনিয়ম বলে মনে করছে অডিট অধিদপ্তর।
যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তোফায়েল আহমেদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সুন্দরবন গ্যাসের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সমকালকে বলেন, কোম্পানিগুলোতে নানা অনিয়ম হচ্ছে। দীর্ঘদিন পেট্রোবাংলা এসব দিকে নজর দেয়নি। এখন সব সংস্থার অনিয়ম নজরে আনা হচ্ছে। সুন্দরবন গ্যাসে কোনো অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখা হবে।