ঢাকার দোহারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী থেকে বালু তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ জন্য খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসানো হয়েছে নদী রক্ষার বাঁধেই। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা এলাকায় গঙ্গা মন্দিরের পাশে এ চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এভাবে বালু তোলায় পদ্মার বাম তীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। তাঁরা ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন। তবে ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁধ ঘেঁষে ড্রেজারটি বসিয়েছেন গঙ্গা মন্দির কমিটির সভাপতি বিন্দা মৃধা। সেখান থেকে দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে পদ্মার বালু তোলা হচ্ছে। এমনকি পাইপ বসাতে বাঁধের বেশ কিছু পাথরের ব্লকও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, বাল্কহেড থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা ও তা সরবরাহের সময় প্রচুর পানির প্রয়োজন। সেই পানি তোলা হচ্ছে রক্ষা বাঁধের পাশ থেকে। ফলে সেখানে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। ফলে বাঁধের বালু ও ব্লক সরে যাচ্ছে।

খননযন্ত্রের মালিক বিন্দা মৃধা দাবি করেন, ‘আমরা বালু কাটছি না। বাল্কহেড থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু আনলোড করছি।’ তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে সেখানে দিনে বাল্কহেড থেকে বালু নামানো হয়। রাত নামলেই সরাসরি নদীতে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলা হয়।

বিন্দা মৃধার ভাষ্য, এ ব্যবসায় তিনি একা নন। সঙ্গে রয়েছেন দোহার উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বসির আহমেদ ও ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের ভাগনে হাবিবুর রহমান। তবে তাঁরা দু’জনই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে মেঘুলা গ্রামের কয়েক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় সমকালের। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তাঁরা। এই ব্যক্তিদের ভাষ্য, বছর তিনেক আগেও পদ্মা নদী গঙ্গা মন্দির এলাকার ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ছিল। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে এই সময়ের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। বহু মানুষ পৈতৃক ভিটা-ফসলি জমি হারিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্য জায়গায় চলে গেছেন।

এ বিষয়ে নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে দিন দশেক আগে তাঁর ইউনিয়নের শেরেবাংলা মাঠ, মেঘুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, মেঘুলা হাটবাজার, পশুহাট ও কামারপট্টিতে বালু ভরাট করা হয়। এসব কাজ বালু ব্যবসায়ী বিন্দা মৃধার মাধ্যমে করা হয়েছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে বালু তোলার বিষয়ে জানেন না তিনি।

জানা গেছে, এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মার বাম তীরে বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেন ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। প্রায় দুই হাজার কোটি ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর দোহার অংশে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা, বাল্কহেডে ওঠানামা বন্ধের নির্দেশ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের। তিনি এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন। তবে এর মধ্যেই পদ্মা থেকে তোলা বালু বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোবাশ্বের আলম বলেন, কেউ যদি এভাবে বালু তোলেন, তবে তাকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। মেঘুলায় খোঁজ নিয়ে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন তিনি।