
‘পই পই করে বলি/ দই খেয়ো গরমে/ সুশীতল হবে জেনো/ শরীরে ও মরমে’– গ্রাম্য ছড়ার মতোই গরমের আরাম দই। শীতেও এর জুড়ি মেলা ভার। আর এটি যদি হয় ‘গৌরনদীর দই’, তাহলে তো কথাই নেই। প্রায় ২০০ বছর নানা উৎসবে ভোজনবিলাসীদের রসনার তৃপ্তি মিটিয়ে আসছে অনন্য স্বাদের এ মিষ্টি পণ্য। এমনকি সুদূর আমেরিকায়ও গড়ে উঠেছে গৌরনদীর দইয়ের দোকান।
১৯৯০ সালে তৎকালীন গৌরনদীর প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টি প্রস্তুতকারক জীবন ঘোষের ‘গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার’-এর কর্মচারী রানা ঘোষ ডিভি লটারি জিতে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ‘গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামে দোকান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে রানা গৌরনদীর দই, মিষ্টি, ঘি, মাখনের সুখ্যাতি আমেরিকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। গৌরনদী বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন খোন্দকার বলেন, ডাওরী ঘোষের উত্তরসূরি হিসেবে ভুবন ঘোষ, রাধাগোবিন্দ ঘোষ, গেদু ঘোষরা গৌরনদীর দই-মিষ্টি, ঘি-মাখন তৈরি করছেন। তাঁদের তৈরি পণ্য বিশেষ করে দইয়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ এমন ছিল; কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলেও তা থেকে যেত। সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে গৌরনদী থেকে এসব পণ্য কলকাতা, করাচি ও রেঙ্গুন পর্যন্ত সরবরাহ করা হতো। সেই থেকে এখনও বিয়ে, জন্মদিন কিংবা মেজবানের খাবারে অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে গৌরনদীর দই।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, ডাওরী ঘোষের দই উৎপাদন পেশা পরবর্তী সময়ে ধরে রাখেন উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভুবন ঘোষ, রাধাগোবিন্দ ঘোষ, গেদু ঘোষ, জীবন ঘোষ, নির্মল ঘোষ, শচীন ঘোষ, সুশীল ঘোষ ও ননী ঘোষ। ননী ছাড়া সবাই মারা গেছেন। ননী ঘোষও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ফলে পরবর্তী প্রজন্মে এসে এখন প্রয়াত শচীন ঘোষের ছেলে গৌরদাস ঘোষ, ননী ঘোষের ছেলে শ্যামল ঘোষ, প্রয়াত সুশীল ঘোষের ছেলে বলরাম ঘোষ গৌরনদীর দই, মিষ্টি তৈরি ও বিক্রিতে যুক্ত আছেন।
শচীন ঘোষের ছেলে গৌরনদী বন্দরের ‘গৌরনিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডার’-এর কর্ণধার গৌরদাস ঘোষ সমকালকে বলেন, ‘গৌরনদীর দইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য সহজে পরিবহনযোগ্য এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৭-৮ দিন ভালো থাকে। একইভাবে শুকনো মিষ্টি ১৫ দিন, মাখন দু-একদিন এবং ঘি এক বছরেও নষ্ট হয় না। তিনি আরও বলেন, ‘দই-মিষ্টি তৈরির উপকরণ দুধ-চিনি; জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। কষ্ট হলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছি।’
ননী ঘোষের ছেলে শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘পূর্বপুরুষের গড়া মানের সঙ্গে আপস করিনি। তবে দুর্মূল্যের বাজারে দিন দিন ভালো জিনিস তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছে।’
মন্তব্য করুন