খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অন্তত পাঁচ প্রার্থী কোটিপতি। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। এর মধ্যে একজনের বছরে আয় ৭ কোটি টাকার বেশি। আরেক প্রার্থীর ব্যাংকঋণ রয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। একাধিক প্রার্থীর রয়েছে জিপ গাড়ি, প্রাইভেটকারসহ বিপুল সম্পদ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল আহসান টিটুর ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৭ কোটি টাকা। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এস এম খুরশিদ আহম্মেদ টোনার বছরে আয় ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। একই রকম আয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেড এ মাহমুদ ডনের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আরও তিন কাউন্সিলর প্রার্থী কোটিপতি। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 জিয়াউল আহসান টিটু হলফনামায় ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা, কৃষি খাত থেকে ২ লাখ টাকা, প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা, এফডিআর ৩৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১১ হাজার টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণ। তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ একর কৃষিজমি, দশমিক ১৩ একর অকৃষি জমি এবং একটি টিনশেড ঘর। ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছে তাঁর ঋণের পরিমাণ ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। স্নাতকোত্তর এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো  মামলা নেই। আয়ের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার এবং সরবরাহকারী। আমার টাকা ঠিকাদারি কাজে বিনিয়োগ করা রয়েছে।

খুরশিদ আহম্মেদ টোনা বছরে বাড়ি ভাড়া থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, কাউন্সিলরের সম্মানী হিসেবে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, দোকান ভাড়া থেকে ৩৯ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১৪ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৩৭ লাখ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার। একটি পিস্তল ও একটি শটগান আছে তাঁর। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ ভরি স্বর্ণ।

তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে একটি ছয়তলা ও একটি তিনতলা বাড়ি, দশমিক ২৪ একর অকৃষি জমি। ব্যাংকঋণ আছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এসএসসি পাস এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে একটি মামলা থাকলেও পরে তিনি অব্যাহতি পান। আয় সম্পর্কে কাউন্সিলর টোনা বলেন, আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ঠিকাদারি ও সরবরাহকারী। বৈধভাবে আয় করি এবং আয়কর দিয়ে থাকি। নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদ ডন এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ২৪ নং ওয়ার্ডে। তিনি ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ২ লাখ টাকা, ব্যাংক সুদ ও কাউন্সিলরের সম্মানী থেকে ৩১ লাখ, কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ও বাড়ি ভাড়া থেকে ৩০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৩৯ লাখ টাকা, ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের দুটি জিপ গাড়ি, ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোটরসাইকেলসহ নানা সামগ্রী।

তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, স্ত্রীর নামে দশমিক শূন্য ৪ একর জমি, যৌথ মালিকানায় দোতলা ভবন ও নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের ৭ ভাগের ২ ভাগ। তাঁর ব্যাংকঋণ আছে ৬ লাখ টাকা। মাস্টার্স পাস এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে একটি মারামারি ও ভাঙচুরের মামলা ছিল। পরে খালাস পেয়েছেন তিনি। কাউন্সিলর ডন বলেন, আমি বৈধভাবে আয় করি এবং কোনো আয় বা সম্পদ গোপন করিনি।

এদিকে ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ পিন্টু কৃষি খাত, ব্যবসা ও সম্মানী থেকে বছরে আয় করেন প্রায় ১২ লাখ টাকা এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৪ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, দুটি ট্যাংকলরি, পণ্যবাহী একটি নৌযান, একটি মাইক্রো, ২০ ভরি স্বর্ণ, স্ত্রীর নামে ২৪ লাখ টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৭ একর কৃষিজমি, ১ একর অকৃষি জমি, পৈত্রিক একতলা ও তিনতলা ভবন এবং ফিলিং স্টেশন, স্ত্রীর নামে ৩২ শতক জমি, পেট্রোল পাম্পের অর্ধেক অংশ। আটটি ব্যাংকে তাঁর ঋণের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। স্নাতক ডিগ্রিধারী পিন্টুর বিরুদ্ধে একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং ছয়টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মফিজুর রহমান পলাশের বছরে কৃষি খাত ও ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা, নিজের ও স্ত্রীর নামে ৯ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাব। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজের নামে দোতলা বাড়ি ও স্ত্রীর নামে ১৫০ শতক জমি। তাঁর ব্যাংকঋণ রয়েছে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এইচএসসি পাস এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগে একটি মামলা ছিল, তা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।

২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম পেশা উল্লেখ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং গণপূর্ত বিভাগের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। হলফনামায় আয় সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ব্যাংকে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অষ্টম শ্রেণি পাস তাজুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।   

বিষয় : হলফনামা বিশ্লেষণ

মন্তব্য করুন