কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনোগ্রাম বাজারসংলগ্ন গড়াই নদী থেকে মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে একটি চক্র। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আখতারের ভাতিজা সাফি আহমেদ। প্রতিদিন অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকার মাটি-বালু বিক্রি হলেও জানে না স্থানীয় প্রশাসন। সাফির দাবি, তাঁর চাচা উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে মাটি কাটা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীপাড়ের নিচ থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে বালু কেটে ট্রলি ও ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশেই শান বাঁধানো বটগাছের ছায়ায় বসে চালকদের কাছ থেকে মূল্য বুঝে নিচ্ছেন এক যুবক। হিসাব লিখে রাখছেন খাতায়। তবে ক্যামেরা চালু করতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। হিসাবের খাতা লুকিয়ে ফেলেন টাকা আদায়কারী যুবকের সহযোগী। তখনও বালুভর্তি দুটি ট্রলি নদীপাড়ে ছিল। পরে চালকরা বালু নিয়ে চলে গেলেও যুবক তাঁদের কাছ থেকে টাকা নেননি।

একপর্যায়ে সাংবাদিক পরিচয় শুনে যুবক নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আখতারের ভাতিজা। তাঁর নাম সাফি। তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশেই মাটি কাটা হচ্ছে। ক্যামেরা বন্ধ করেন, নিউজ করার দরকার নেই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’

স্থানীয়রা জানান, বনোগ্রাম বাজারসংলগ্ন গড়াই নদীর মাটি লুটপাট চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। মাঝে প্রশাসনের কড়াকড়িতে কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও চলতি সপ্তাহে ফের শুরু হয়েছে। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি ও ট্রাক্টরে করে মাটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। নদীভাঙনের মুখে পড়েছে বনোগ্রাম বাজার ও আশপাশের এলাকা।

তবে সাফির দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। যদিও ট্রলিচালকরা জানান, সরকারি প্রকল্পের জন্য নয়, সাফির কাছ থেকে প্রতি গাড়ি মাটি ৪৫০ টাকায় কিনে অন্যের কাছে বিক্রি করেন তাঁরা। তাঁদের হিসাবে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রলি মাটি-বালু তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা সব জেনেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বালু-মাটি কাটা হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশেই কাটা হচ্ছে বালু ও মাটি। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললে বিপদে পড়তে হবে।

চেয়ারম্যান বাবুল আখতার দাবি করেন, টিআর প্রকল্পের জন্য সামান্য মাটি কাটা হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যেই এটি বন্ধ হয়ে যাবে। এর মধ্যে দু’এক গাড়ি মাটি কেউ বিক্রি করতে পারেন। এটি ধরার মতো বিষয় নয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন, গড়াই নদী থেকে বালু কাটার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ ব্যাপারে কাউকে অনুমতিও দেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।