দরিদ্র পরিবারের সন্তান রোকসানা বেগম (৩২)। তাই পড়ালেখা হয়নি। কিছু আরবি শিক্ষার পর ইজিবাইকচালক আবদুল মজিদের (৩৭) সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঘোষপালা গ্রামে। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁদের সংসার।

মা রোকসানার বড় মেয়ে পলি আক্তার (১৫) ও তাহমিনা (৬) মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। ছেলে আবু হুরাইরার বয়স মাত্র দুই বছর।

প্রায় এক মাস আগে ছোট মেয়ের চিকিৎসার জন্য নান্দাইল উপজেলা হাসপাতালে গেলে দুই নারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন রোকসানা। কানের স্বর্ণের দুল ও নগদ আড়াই হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এর পরই প্রতিজ্ঞা করেন, একদিন না একদিন ছিনতাইকারীদের ধরবেনই তিনি।

গত সোমবার নান্দাইল সদর বাজারে অবস্থিত মদিনা লাইব্রেরিতে বড় মেয়ের জন্য বই কিনতে যান রোকসানা। বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে দোকানের কাছেই একটি অটোরিকশার ভেতরে তাঁর কানের দুল ছিনতাইকারী সেই দুই নারীকে দেখতে পান। বোরকায় মুখ ঢেকে অটোরিকশার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা মাত্রই চালক অটোরিকশাটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যেতে চান। তখন রোকসানা এক লাথি দিয়ে চালককে ফেলে দিয়ে চিৎকার শুরু করেন। লোকজন আসার আগেই চালক ও অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে সাজিদা আক্তার (২২) নামের এক ছিনতাইকারী। পুলিশ গিয়ে সাজিদা ও অটোরিকশাটি থানায় নিয়ে যায়। সাহসী নারী হিসেবে রোকসানার নাম ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘোষপালা গ্রামে অবস্থিত স্বামীর বাড়িতে গিয়ে রোকসানাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ছিলেন বাবার বাড়ি নান্দাইল পৌর সদরের দক্ষিণ চণ্ডীপাশা মহল্লায়। সেখানে গেলে রোকসানার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির–

সমকাল: আপনার পুরো নাম?

রোকসানা: আমাকে কেউ রোকসানা আক্তার, কেউবা রোকসানা বেগম বলে ডাকেন। কাগজেপত্রে তো কোনো নাম লেখা নাই।

সমকাল: পড়ালেখা কতটুকু করেছেন?

রোকসানা: বাবা গরিব। তাই বাংলা লাইনে পড়তে পারিনি। তবে মসজিদে গিয়ে কিছু আরবি পড়েছি।

সমকাল: কত বছর বয়সে বিয়ে হয়?

রোকসানা: ১৬-১৭ বছর বয়সে।

সমকাল: যে কাজটি করেছেন, তা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিবাদ। এমন প্রতিবাদ করার মনমানসিকতা কখন থেকে শুরু?

রোকসানা: যেদিন হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে অচেতন করে আমার কানের দুল ও নগদ টাকা নিয়ে যায়, সেদিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করি ওই দুই নারীকে একদিন না একদিন ধরবোই। গতকাল (সোমবার) সেই সুযোগ পেয়ে যাই। সাহস নিয়ে চালককে লাথি দিয়ে ফেলে একজনকে ধরে ফেলি। আফসোস, সবগুলোকে ধরতে পারলাম না।

সমকাল: থানায় গিয়েছিলেন?

রোকসানা: হ্যাঁ, সেখানে যাওয়ার পর আমাকে বাদী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, তাই রাজি হইনি। তবে যাই হোক, আমার কানের দুল ও টাকা ফেরত চাই।

সমকাল: আপনার সন্তানদের কি প্রতিবাদী হতে শিক্ষা দেবেন?

রোকসানা: হ্যাঁ, এ কারণেই তাদের মাদ্রাসায় পড়তে দিয়েছি।

সমকাল: বাল্যবিয়ে সম্পর্কে আপনার মত?

রোকসানা: আমি চাই স্বাবলম্বী হওয়ার পরই সব মেয়ের বিয়ে হোক। আমি কখনও আমার মেয়েদের বাল্যবিয়ে দেব না। এ কারণেই বড় মেয়েটাকে এখনও পড়াচ্ছি।

সমকাল: আপনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, এখন কেমন লাগছে?

রোকসানা: অনেকেই বিষয়টা জানেন না, যারা জেনেছেন তারা বাড়িতে এসে বাহবা দিচ্ছেন। ভালোই লাগছে।

সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।

রোকসানা: আপনাকেও ধন্যবাদ।