আগের দু’বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীসহ কয়েকটি দেশে হাঁড়িভাঙা আম উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে আমটির সুখ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হাঁড়িভাঙা বিক্রি করে বছরে শতকোটি টাকার ওপর আয় করেন চাষিরা। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বাড়তি আয়ের আশার পরিবর্তে উদ্বেগে দিন কাটছে তাঁদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০ জুনের মধ্যে বাজারে আসবে স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় আমটি। এবার ফলন ভালো হলেও মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে আকার হয়েছে ছোট। আগের বছরগুলোয় দু-তিনটিতে কেজি হলেও এবার পাঁচ-ছয়টি আমে হবে এক কেজি।

কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ রয়েছে। ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আছে বাণিজ্যিক বাগান। ৩৬৪ হেক্টর পতিত জমিতে হাঁড়িভাঙা গাছ রয়েছে। ৩ হাজার ৬৯২টি বাগান ও পতিত জমিতে ৩ লাখ ৬৫ হাজার গাছ আছে। এবার ১৭ হাজার টন হাঁড়িভাঙা উৎপাদনের আশা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

আখিরাহাট এলাকার আবদুস সালাম সরকার ১৪ একর জমিতে হাঁড়িভাঙার বাগান করেছেন। তিনি আমের সম্প্রসারণ ও বিপণনের জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন। এ আম চাষি বলছিলেন, আমের ফলন ভালো হলেও খরার কারণে গাছ সুস্থ-সবল ছিল না। এ জন্য আকার ছোট হয়েছে। এক কেজিতে আগের তুলনায় দ্বিগুণ আম লাগবে।

উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের তেকানী গ্রামের প্রয়াত নফল উদ্দিনের হাত ধরে ৩৫ বছর আগে হাঁড়িভাঙার উৎপত্তি। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ আমের বাগান গড়ে ওঠে। খোড়াগাছের পদাগঞ্জ ও আশপাশের লাল মাটিতে উৎপাদিত হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি। স্থানটিতে আমের বিশাল হাট বসে। পার্শ্ববর্তী রানীপুকুর, ময়েনপুর, বালুয় মাসিমপুর, বড়বালা, মিলনপুর, লতিবপুর, গোপালপুর, দুর্গাপুর ও চেংমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়ও হাঁড়িভাঙার বাগান রয়েছে।

গত রোববার সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে অসংখ্য বাগানে শোভা পাচ্ছে হাঁড়িভাঙা আম। সংশ্লিষ্টরা জানান, আমটি এবারও বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। জুনের মাঝামাঝি গাছ থেকে হাঁড়িভাঙা সংগ্রহ শুরু হবে। পদাগঞ্জের পাশাপাশি মিঠাপুকুর, রংপুর মহানগরীর টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় চলবে বেচাকেনা।

শেষ সময়ে এসে বাগানের আম পরিচর্চায় ব্যস্ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, কিছুদিন পর শুরু হবে বেচাকেনা। রংপুর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ আন্যান্য জেলার পাইকাররা ট্রাকে করে আম নিয়ে যান। তবে এবার আকার ছোট হওয়ায় এক কেজিতে বেশি আমের প্রয়োজন হবে। ফলে বেশি লাভ করতে পারবেন না চাষি।

বাগান মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, হাঁড়িভাঙা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। গোপালপুর ইউনিয়নের বান্দেরপাড়া বাবুরহাট গ্রামের চাষি মাহিদুল ইসলাম আউলিয়া, খোড়াগাছের আবদুস সবুর, কফিল উদ্দিন, শের শাহ্‌, মিয়াজান, গোলাম রাব্বানীসহ অনেকে একই কথা বলেন।

খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন,  আমের মৌসুমে পদাগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। হাঁড়িভাঙা এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি গৌরবের, সম্মানের।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও এবার ভালো ফলন হয়েছে। প্রত্যেক বাগানে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। খরার কারণে আকার বৃদ্ধিতে সমস্যা হচ্ছিল। তবে কৃষকদের কৃত্রিমভাবে গাছের গোড়ায় ও আমে পানি দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ক্ষতি কমবে। সংগ্রহের সময়ের মধ্যে আকার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।