অনেক স্থানে উঠে গেছে পিচ। ইটের খোয়া সরে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। দু’পাশের মাটি ও ইটও সরে গেছে। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এমন বেহাল দশা ঝিনাইদহ-নারিকেলবাড়িয়া ও নারিকেলবাড়িয়া-হাটগোপালপুর সড়কের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কটির আট বছরের বেশি সময় ধরে এমন অবস্থা। ধুলাবালুতে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পাশের বাসিন্দারাও সমস্যায় রয়েছেন। সড়কের হামদহ ঘোষপাড়া মোড়, মোশাররফ হোসেন কলেজ এলাকা, গোবিন্দপুর, বড়াতলা বাজার, সয়াইলসহ বিভিন্ন স্থানের অবস্থা বেশি করুন।

সড়কের কারণে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহালেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ নেই। স্থানীয় মোশাররফ হোসেন কলেজ এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে সড়কটি। গাড়িতে ওঠানামা করা যায় না। ভ্যানে যেতে ভয় করে। পাশেই বাড়ি হওয়ায় ধুলাবালুতে কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে শোনা যায়, সড়কের কাজ হবে; কিন্তু হয় না।

জানা গেছে, জেলা সদর হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু হওয়া সড়কটি নারিকেলবাড়িয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার। আর নারিকেলবাড়িয়া থেকে হাটগোপালপুর বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৯ কিলোমিটার। ব্যবসায়িকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নাকিলেবাড়িয়া ও হাটগোপালপুর বাজারসহ জেলা শহরের সঙ্গে সদরের কালীচরণপুর, সুরাট, দোগাছী, ঘোড়শাল, ফুরসুন্দী এবং কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি।

বেহাল অবস্থার কারণে ছোট-বড় যানবাহন পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৪ মে ঝিনাইদহ-নারিকেলবাড়িয়া সড়কের গোবিন্দপুর এলাকায় সারবোঝাই আলমসাধু উল্টে যায়। এতে সার নষ্ট হয়েছে। আহত হন একজন। গত ৮ মে বড়াতলা বাজার এলাকায় দুটি মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে আহত হন তিনজন। এর অন্তত ২৫ দিন আগে বিষ্ণুবাড়ি এলাকায় ইজিবাইক উল্টে তিনজন আহত হন।

স্থানীয় ছোট কামারকুণ্ডু গ্রামের মাজেদুর রহমান বলেন, ক্ষেতের ফসল নিয়ে ভ্যানে করেও বাজারে যাওয়া যায় না। ভাঙা সড়কে যেতে বেশি ভাড়া চায়। বাইসাইকেল নিয়ে চলাচল করতেও সমস্যা। দীর্ঘদিন কষ্ট ভোগ করলেও সরকার কাজ করছে না। ইজিবাইকচালক গাজী মনির বলেন, খানাখন্দ ও গর্তের কারণে ইজিবাইক ঠিকমতো চালানো যায় না। নষ্ট হয়ে যায় গাড়ি, দুর্ঘটনার ভয় থাকে। গর্তে উল্টে যাওয়ার শঙ্কা নিয়ে চালাতে হয়।

তিন-চার বছর ধরে টেন্ডার হওয়ার কথা শুনছেন সদর উপজেলার কালীচরণপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। তবে কোনো ঠিকাদারকে কাজ করতে দেখেননি। তিনি বলেন, পরিচিত কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, যে বাজেট, নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় এ কাজে লোকসান হবে। এমন অবহেলায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পড়ে থাকতে পারে না।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘উইকেয়ার’ প্রকল্পের আওতায় সংস্কার হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। কাজের আওতায় থাকবে ১২ ফুটের পরিবর্তে ১৮ ফুট প্রশস্ত করা, ভাঙাচোরা স্থানে রাস্তা পুনর্নির্মাণ, প্যালাসাইডিং ও প্রয়োজনীয় স্থানে কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। জটিলতা কেটে গেলে ও কার্যাদেশ হলে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।

ঝিনাইদহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনোয়ার উদ্দিন বলেন, সড়কটির টেন্ডার কার্যক্রম শেষের দিকে। অধিদপ্তর থেকে ঠিকাদার নির্বাচন শেষে কার্যাদেশ হলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। তখন মানুষের কষ্ট থাকবে না।